পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

কী-এক অপূর্ব দৃশ্য চোখের সুমুখে খুলে যাবে। সে যে কী তা কাল্পনাতেই থাকে, কথায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি কল্পনার সঙ্গে সত্যরাজ্যের প্রায় বনে না। আমার স্বভাবদোষে অনেক জিনিস ভালো করে ভোগ করতে পারি নে। কোনো নূতন দেশে আসবার আগেই আমি তাকে এমন নূতনতর মনে করে রাখি যে, এসে আর তা নূতন বলে মনেই হয় না; কোনো মহান্ দৃশ্য দেখবার আগেই আমি তাকে এমন মহান্‌-তর মনে করে রাখি যে, তা দেখে আর মহান বলে মনে হয় না। ইউরোপ আমার তেমন নতুন মনে হয় নি শুনে সকলেই অবাক।

 আমরা রাত্রি তিনটের সময় ব্রিন্দিশির হোটেলে গিয়ে শুয়ে পড়লেম। সকালে একটা আধ-মরা ঘোড়া ও আধ-ভাঙা গাড়ি চড়ে শহর দেখতে বের হলেম। সারথির সঙ্গে আর গাড়িঘোড়ার সঙ্গে এমন অসামঞ্জস্য যে কী বলব! সারথির বয়স চোদ্দ হবে, কিন্তু ঘোড়াটির বয়স পঞ্চাশ হবে―আর গাড়িটি পৌরাণিক যুগের মনে হল। ছোটোখাটো শহর যেমন হয়ে থাকে ব্রিন্দিশিও তাই। কতকগুলি কোঠাবাড়ি, দোকান বাজার, রাস্তাঘাট আছে; হাঁ করে দেখবার জিনিস একটিও নেই। ভিক্ষুকেরা ভিক্ষা করে ফিরছে, দু-চার জন লোক মদের দোকানে বসে গল্প-গুজব করছে, দু-চার জন রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে হাসি-তামাসা করছে, লোকজনেরা অতি নিশ্চিন্তমুখে গজেন্দ্রগমনে গমন করছে―যেন কারও কোনো কাজ নেই, কারও কোনো ভাবনা নেই―যেন শহর-সুদ্ধ ছুটি। রাস্তায় বড়ো গাড়িঘোড়ার সমারোহ নেই, লোকজনের সমাগম নেই। আমরা খানিক দূর যেতেই রাস্তা থেকে একজন ছোকরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে হাতে একটা তরমুজ নিয়ে গাড়োয়ানের পাশে গিয়ে বসল। ব―মহাশয় বললেন, ‘বিনা আয়াসে

১৫