আমার বোধ হয় এ রকম হবার মানে আছে―হাজার হোক, ইংরেজ মেয়েরা সম্পূর্ণ আলাদা জাত, তারা আমাদের কথাবার্তা ভাবভঙ্গী আচারব্যবহারের মর্মের ভিতরে ঢুকতে পারে না। আমি এতদূর ইংরিজি ভাব শিখি নি যে তাদের সঙ্গে বেশ খোলাখুলি পরিচিত ভাবে কথাবার্তা কইতে পারি। তাদের সঙ্গে দেখা হলে কথাবার্তা কবার যে-সকল বাঁধি গৎ আছে সেগুলি খুব ঝাড়তে পারি―আমি জিজ্ঞাসা করতে পারি, সম্প্রতি অপেরায় যাওয়া হয়েছিল কি না, অমুক থিয়েটরে অমুক অভিনেতার অভিনয় কেমন লাগল, আজ ভারী ভালো দিন ইত্যাদি―এই-সকল বাঁধি গতের সীমা লঙ্ঘন করতে সাহস হয় না। ইংরিজি মনের ভাবগতি খুব ভালো রকম জানলে তবে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে দুই-একটা কথাবার্তা কওয়া যেতে পারে। ভারতবর্ষীয়েরা আমাদের আপনাদের লোক, তাদের কাছে আমাদের অধিকার অনেকটা বিস্তৃত, চন্দ্রলোকের একটা মেয়ে মনে করে তাদের কাছে ঘেঁষতে তেমন একটু ইতস্ততঃ করবার ভাব আসে না। যা হোক, দুঃখের কথা বলব কী, যখন আমি একেবারে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে পড়েছি তখন শোনা গেল যে, সে একটি ফিরিঙ্গি মেয়ে। শুনে আমার মনটা একেবারে বিগড়ে গেল, আর তার সঙ্গে আলাপ করা গেল না, কিন্তু কালো মুখের ছাপ আমার মনে রয়ে গেল।
আজ ব্রাইটনের অনেক তপস্যার ফলে সূর্য উঠেছেন। এ দেশে রবি যে দিন মেঘের অন্তঃপুর থেকে বের হন সে দিন এ দেশে একটি লোকও কেউ অন্তঃপুরে থাকে না―সে দিন লোকেরা একটু বেড়িয়ে বাঁচে। সে দিন সমুদ্রের ধারে বেড়াবার রাস্তায় লোক কিল্বিল্ করতে থাকে―এ দেশে যদিও ‘বাড়ির ভিতর’ নেই, তবু এ দেশের মেয়েরা যেমন অসূর্যম্পশ্যরূপা এমন আমাদের