পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

নীচ শ্রেণীর দাসী, কতকগুলি হীনস্বভাব ল্যান‍্ড‍্লেডির সঙ্গে বৎসরদুয়ের হীন আমোদে কাটিয়ে যদি তুমি তোমার স্ত্রীর ভালোবাসা তোমার বোনের স্নেহ ভুলে যেতে পারো, কত বৎসরের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারো, বাড়ির সমস্ত টান ছিঁড়ে ফেলতে পারো, তবে তুমি কী না করতে পারে বলো দেখি।

 আমি এক জনকে জানি, তিনি তাঁর ‘মেজদিদি’ ‘সেজদিদি’ -বর্গকে এত মান্য করে চলতেন যে, তাঁর কৃষ্ণবর্ণ গুরুজনকে তার অর্ধেক মান্য করলে তাঁরা তাঁকে কুলের প্রদীপ ছেলে বলে মাথায় করে রাখতেন। তাঁর ঘরে বা তাঁর পাশের ঘরে যদি এই দাসীদের মধ্যে কেউ উপস্থিত থাকত তা হলে তিনি সসম্ভ্রম সংকোচে শশব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সে রকম অবস্থায় যদি তাঁর কোনো ইঙ্গবঙ্গ বন্ধু গান করতেন বা হাস্যপরিহাস করতেন তা হলে তিনি অমনি মহা অপ্রতিভ হয়ে বলে উঠতেন, ‘আরে চুপ করো, চুপ করো, মিস এমিলি কী মনে করবেন?’ বিলেতে এসে এঁরা এই রকম কতকগুলি নীচ শ্রেণীর মেয়েদের সঙ্গে মিশে বিবিদের সঙ্গে আলাপ করছি মনে করে মহা পরিতোষ লাভ করেন। আমার মনে আছে, দেশে থাকতে একবার এক ব্যক্তি বিলেত থেকে ফিরে গেলে পর আমরা তাঁকে খাওয়াই; খাবার সময় তিনি নিশ্বাস ত্যাগ করে বললেন, ‘এই আমি প্রথম খাচ্ছি যেদিন আমার খাবার টেবিলে কোনো লেডি নেই।’ শুনে আমি একটু আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেম; আমি জানতেম যে, কোনো ভদ্র বিবি এক জন অস্ত্রীক পুরুষের বাড়িতে দেখা করতে বা খেতে আসেন না। তবে এ ব্যক্তি বলে কী! এ বিলেতে যত দিন ছিল নিমন্ত্রণ খেয়ে কাটিয়েছিল নাকি? যা হোক, তখন মনে করেছিলেম এ ব্যক্তি বিলেত থেকে আসছে, অবিশ্যি সেখেনে এমন কিছু দস্তুর আছে যা আমি ঠিক জানি নে। ও মা! এখেনে এসে

৭৬