পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

 অতএব যারা ভদ্রসমাজে মিশতে চান ও ভদ্র বলে আত্মপরিচয় দিতে চান তাঁরা যেন কতকগুলো রাঁধুনি ঘরঝাঁটুনি দাসীদের সঙ্গে অযোগ্য ঘনিষ্ঠতা না করেন। বিলেতের kitchen-রাজ্যে যাঁরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন তাঁরা যেন দেশে গিয়ে না বলেন যে, ‘বিলেত থেকে শিক্ষা পেয়ে এলেম।’ এইরূপ নীচ শ্রেণীর মেয়েদের উপরে ভালোবাসা দেখিয়ে রুটি ও কয়লা -ওয়ালা যুবক বেচারিদের মনে ঈর্ষা জন্মিয়ে কষ্ট দেওয়া কি সদয়হৃদয় ভদ্রলোকের কাজ? শোনা যায়, এখেনে যখন অল্পস্বর বাঙালির আমদানি ছিল তখন এখানকার সমাজে তাঁদের অত্যন্ত মান ছিল। অনেক ভদ্রলোক আলাপ না থাকলেও তাঁদের নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দিতেন। এখানকার অনেক Lord ও Duke -গণ তাঁদের সান্ধ্যসমাগমে আহ্বান করতেন। এখানকার ধনীলোকদের নিমন্ত্রণসভায় তাঁদের সমাদরের সীমা ছিল না। কিন্তু এখন সে-সব নেই। এখন তুমি বিলেতে এলে তোমার ভাড়া-করা ক্ষুদ্র ঘরটিতে দিন-রাত বসে থাকো, ডাক্তারি ও আইনের কেতাবের লম্বা লম্বা পরিচ্ছেদগুলো গলাধঃকরণ করো, Polly Molly Nelly -বর্গের সঙ্গে রসিকতার আদান-প্রদান করো ও রাত্রি আড়াইটার পর বিছানায় গিয়ে নিদ্রা দাও। যদি তুমি স্বভাবতঃ মিশুক লোক হও তবে জোগাড়জাগাড় করে দুচারটে পরিবারের সঙ্গে কোনো উপায়ে আলাপ করে নেও, কিন্তু পূর্বকার মতো সে রকম সমাদর আর নাই, ও ক্রমে ক্রমে হয়তো এমন দিন আসতে পারে যে দিন ভারতবর্ষের ইংরাজদের মতো এখানকার ইংরাজেরাও আমাদের ঘৃণার চক্ষে দেখবেন— কিন্তু যদি সে দিন আসে তবে ইংরাজদের দোষ দিয়ো না। অনেক ভারতবর্ষীয় এখেনে এসে যে রকম অন্যায় ব্যবহার করে গেছেন তা আমি লিখতে চাই নে। ভারতবর্ষীয়দের সংখ্যা এখানে অত্যন্ত

৭৮