পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

ভাব দেখা যায়, এই গাছগুলােয় তার বিপরীত। এরা নিতান্ত দরিদ্র লক্ষ্মীছাড়া, বহু কষ্ট বহু চেষ্টায় কায়ক্লেশে অষ্টাবক্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছে; এক-একটা এমন বেঁকে ঝুঁকে পড়েছে যে পাথর উঁচু করে তাদের ঠেকো দিয়ে রাখতে হয়েছে।

 বামে চষা মাঠ; শাদা শাদা ভাঙা ভাঙা পাথরের টুকরাে চষা মাটির মধ্যে মধ্যে উৎক্ষিপ্ত। দক্ষিণে সমুদ্র। সমুদ্রের একেবারে ধারেই এক-একটি ছােটো ছােটো শহর দেখা দিচ্ছে। চর্চ-চূড়া-মুকুটিত শাদা ধবধবে নগরীটি একটি পরিপাটি তন্বী নাগরীর মতাে কোলের কাছে সমুদ্রদর্পণ রেখে নিজের মুখ দেখে হাসছে। নগর পেরিয়ে আবার মাঠ। ভুট্টার ক্ষেত, আঙুরের ক্ষেত, ফলের ক্ষেত, জলপাইয়ের বন; ক্ষেতগুলি খণ্ড-প্রস্তরের-বেড়া-দেওয়া। মাঝে মাঝে এক-একটি বাঁধা কূপ। দূরে দূরে দুটো-একটা সঙ্গীহীন ছোটো শাদা বাড়ি।

 সূর্যাস্তের সময় হয়ে এল। আমি কোলের উপর এক থোলো আঙুর নিয়ে বসে বসে এক-আধটা করে মুখে দিচ্ছি। এমন মিষ্টি টস্‌টসে সুগন্ধ আঙুর ইতিপূর্বে কখনো খাই নি। মাথায়-রঙিন-রুমাল-বাঁধা ঐ ইতালীয়া যুবতীকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইতালীয়ানীরা এখানকার আঙুরের গুচ্ছের মতো,অম্‌নি একটি বৃন্তভরা অজস্র সুডােল সৌন্দর্য, যৌবনরসে অম্‌নি উৎপূর্ণ এবং ঐ আঙুরেরই মতাে তাদের মুখের রঙ, অতি বেশি শাদা নয়।

 এখন একটা উচ্চ সমুদ্রতটের উপর দিয়ে চলেছি; আমাদের ঠিক নীচেই ডান দিকে সমুদ্র। ভাঙাচোরা জমি ঢালু হয়ে জলের মধ্যে প্রবেশ করেছে। গােটা চার-পাঁচ পাল-মােড়া নৌকা ডাঙার উপর তোলা। নীচেকার পথ দিয়ে গাধার উপর চড়ে লোক চলেছে। সমুদ্রতীরে কতকগুলাে গােরু চরছে, কী খাচ্ছে তারাই

৮৯