পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

 শুক্রবার। চমৎকার সকাল হয়েছে। সমুদ্র স্থির, আকাশ পরিষ্কার, সূর্য উঠেছে। কন্‌কনে ঠাণ্ডা। আমাদের দক্ষিণে ভােরের বেলা অল্প অল্প তীরের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল। অল্পে অল্পে কোয়াশার আবরণ উঠে গেল, Isle of Wightএর পার্বত্য তীর এবং Ventnor শহর ক্রমে ক্রমে প্রকাশ হয়ে পড়ল। পর্বতের ঢালুর উপরে সমুদ্রের তীরে শাদা শাদা বাড়ি বিজ্‌বিজ্‌ করছে― লিলিপুট শহরের মতাে। এ জাহাজে বিষম ভিড় এক কোণে নিরিবিলি চৌকি নিয়ে বসে লেখবার যাে নেই এবং জায়গাও নেই। Brindisi থেকে আরও অনেক লােক উঠবে। ভরসা করি আমাদের cabinএ আর কেউ আসবে না। আমাদের Massilia জাহাজের purserকে এ জাহাজে দেখলুম। সে আমাকে বললে, তােমার যখন যা আবশ্যক হবে আমাকে জানিয়াে। ডিনার-টেবিলে আমার পাশেই সে আসন গ্রহণ করেছে; ডেকের উপর আমাকে পাশে নিয়ে হট্‌ হট্‌ করে বেড়াতে চায় এবং বিস্তর গল্প বলে। লােক খুব ভালাে সন্দেহ নেই, নইলে আমাকে বেছে নিলে কেন সমজ্‌দার বটে। কিন্তু সর্বদা আমার প্রতি মনােযােগ দিলে আমার লেখাপড়া বন্ধ করতে হয়। Wallaceএর Darwinism পড়ছি, বেশ লাগছে— ইচ্ছে করছে বাংলায় তর্জমা করতে। কিন্তু আমার দ্বারা হয়ে উঠবে না।

 আজ ডেকে বেড়াতে বেড়াতে একটি লােকের সঙ্গে আলাপ হল, সে কর্তাদাদামশায়কে জানত। একটা বড় সেনাপতি গােছের লােক, Egyptএ যাচ্ছে। অনেক কথা হল। English Govemmenটের কথা হতেই আমি ইংরেজের ব্যবহার সম্বন্ধে দু-একটা কথা বললুম। সে আশ্চর্য হয়ে গেল। সে বললে, আমাদের সময়ে ঐরকম ছিল বটে, কিন্তু এখনাে আছে না কি? শুনে স্বজাতির

১৮৮