পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

এই কীটদষ্ট চেক-বইটা মাত্র অবশিষ্ট আছে। যখন কেহ দরিদ্র অপবাদ দেয় তখন প্রাচীন লােহার সিন্দুক থেকে ঐ বইটা টেনে নিয়ে তাতে বড়াে বড়ো অঙ্কপাতপূর্বক খুব সতেজে নাম সই করতে থাকি। শত সহস্র লক্ষ কোটি কলমে কিছুই বাধে না। কিন্তু যথার্থ তেজস্বী লােকে এ ছেলেখেলার চেয়ে মজুরি করে সামান্য উপার্জনও শ্রেয়স্কর জ্ঞান করে।

 অতএব আপাততঃ আমাদের কোনাে বিশেষ মহত্বে কাজ নেই। আমরা যে ইংরাজি শিক্ষা পাচ্ছি সেই শিক্ষা-দ্বারা আমাদের ভারতবর্ষীয় প্রকৃতির অসম্পূর্ণতা দূর ক’রে আমরা যদি পুরা প্রমাণসই একটা মানুষের মতাে হতে পারি তা হলেই যথেষ্ট। তার পরে যদি সৈন্য হয়ে রাঙা কুর্তি প’রে চতুর্দিকে লড়াই ক’রে ক’রে বেড়াই কিম্বা আধ্যাত্মিক হয়ে ঠিক ভ্রূর মধ্যবিন্দুতে কিম্বা নাসিকার অগ্রভাগে অহর্নিশি আপনাকে নিবিষ্ট করে রেখে দিই, সে পরের কথা।

 আশা করি আমরা নানা ভ্রম এবং নানা আঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে সেই পূর্ণ মনুষ্যত্বের দিকেই যাচ্ছি। এখন আমরা দুই বিপরীত শক্তির মধ্যে দোদুল্যমান, তাই উভয় পক্ষের সত্যকেই অনিশ্চিত ছায়ার মতাে অস্পষ্ট দেখাচ্ছে; কেবল মাঝে মাঝে ক্ষণেকের জন্য মধ্য-আশ্রয়টি উপলব্ধি করে ভবিষ্যতের পক্ষে একটা স্থির আশাভরসা জন্মে। আমার এই অসংলগ্ন অসম্পূর্ণ রচনায় পর্যায়ক্রমে সেই আশা ও আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে।

 কিন্তু এ-সকল কেবল আমার মনের কথা মাত্র। নতুবা আমি যে য়ুরােপ এবং এসিয়ার মধ্যবর্তী ককাশ্বস পর্বতের সর্বোচ্চ শিখরে চড়ে এই খানকতক কাগজের ভেঁপু পাকিয়ে তার মধ্যে ফুৎকার প্রয়ােগ করছি, যা শুনে যুবক য়ুরোপ সহসা তার কাজকর্ম বন্ধ করে স্তম্ভিত হয়ে ঊর্ধ্বকর্ণে দাঁড়িয়ে যাবে এবং এই গুরুতর দেহভারক্লান্ত

৫৮