পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রথম শ্রেণীর লেখক হয়েও অধিকতর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যশ্রমের নিদর্শন রেখে যান নি। বোধ হয় তিনি লেখনী ধারণের চেয়ে অধ্যয়ন ও চিন্তা করতেই বেশী ভালোবাসতেন। আমি তাঁর বাড়ীতে কখনো যাই নি বটে, কিন্তু শুনেছি তাঁর নিজস্ব লাইব্রেরির আকার ছিল প্রকাণ্ড। বই কেনার ও বই পড়ার নেশা ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রবল। মণিলাল যদি “সবুজপত্রের” ভার তাঁর স্কন্ধে নিক্ষেপ না করতেন, তাহ’লে হয়তো তাঁর রচনার সংখ্যা হ’ত অত্যল্প।

 কেবল ইংরেজী নয়, ফরাসী সাহিত্যের উপরেও তাঁর অবাধ অধিকার ছিল। তাঁর লেখা পড়লে ও মুখের কথা শুনলে মনে হ’ত সংস্কৃত সাহিত্যেও তিনি ছিলেন লব্ধপ্রবেশ। কলকাতায় ইংরেজী সাহিত্যে এম. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বিলাতে যান ব্যারিষ্টার হবার জন্যে। ব্যারিষ্টার হয়েই দেশে ফিরে এলেন বটে, কিন্তু ঐ পর্যন্ত। আদালতের মামলা তাঁকে আকর্ষণ করে নি। সরস্বতীর পদ্মসরোবরে জলকেলিমুগ্ধ মরালের মতই কাটিয়ে গিয়েছেন তিনি সারা জীবনটা। প্রথমে ছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথের বন্ধু, পরে হন তাঁর কুটুম্ব। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথের কন্যা শ্রীমতী ইন্দিরা দেবী তাঁর সহধর্মিণী।

 এইবারে প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ের কথা বলি। মণিলাল ও শ্রীসৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় তখন “ভারতী”র সম্পাদক এবং আমিও অন্তরাল থেকে “ভারতী”র সেবা করি। সুকিয়া (এখন কৈলাস বসু) স্ট্রীটে ছিল “ভারতী”র কার্যালয়। সেখানে তিনতলার বৃহৎ একটা কক্ষে প্রতিদিন বৈকালেই বসত বৃহৎ একটি সাহিত্য-বৈঠক। সেই আসরে যাঁরা নিয়মিতভাবে যোগদান করতেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিষ্য বা

১১২