পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

মাঝে বলেছেন, ‘একটা নতুন কবিতা ধরেছি, কিন্তু শেষ করতে পারছি না।’ তখন তাঁর মুখ দেখলে বোঝা যেত মনে মনে তিনি কষ্টভোগ করছেন। অনেক মাসিক পত্রিকার ছিনেজোঁক গোছের দুঁদে সম্পাদকও বারংবার তাঁকে আক্রমণ ক’রে তাঁর কাছ থেকে একটিও কবিতা আদায় করতে পারেন নি। তাগাদা বা চক্ষুলজ্জার খাতিরে কখনো তিনি লেখনী ধারণ করেছেন ব’লে মনে হয় না। কবিতা স্বয়মাগতা হ’লেই তাঁর প্রাণে জাগত রচনার জন্যে প্রেরণা। তাই ভারে নয়, ধারে কাটে তাঁর কবিতা। সেগুলির সংখ্যা বেশী নয় বটে, কিন্তু তাদের মধ্যে নিম্নশ্রেণীর বস্তু নেই বললেও চলে।

 “অর্চনা” মাসিক পত্রিকার কার্যালয়ে প্রত্যহ আমাদের একটি সান্ধ্য বৈঠক বসত। সেইখানেই তাঁর প্রথম দেখা পাই, যদিও তাঁর কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল বাল্যকাল থেকেই। একহারা, ছিপছিপে দেহ, প্রায় গৌরবর্ণ, মুখশ্রী বিশেষ উল্লেখ্য বা তীক্ষ্ণধীজ্ঞাপক নয় বটে, কিন্তু মনে কোন বিরাগও জাগায় না। তবে কবিতা প’ড়ে কবির যে মূর্তি কল্পনা ক’রে নিয়েছিলুম, আসল মানুষটির সঙ্গে তার মিল হ’ল না। এই রকমটাই হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথের মত কবি-চেহারা এদেশের কোন কবিই লাভ করেন নি। আমি যে সব বিখ্যাত মৃত কবিকে স্বচক্ষে দেখেছি— যেমন অক্ষয়কুমার, দেবেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তযতীন্দ্রমোহন বাগচী প্রভৃতি—তাঁদের কারুর চেহারাই কবিজনোচিত নয়। তবে দ্বিজেন্দ্রলাল, সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রমথনাথ রায়চৌধুরী সম্বন্ধে এমন কথা বলা চলে না।

 অক্ষয়কুমার বেশ সদালাপী ও মিশুক মানুষ ছিলেন। সাদাসিধে সাজ-পোষাক। প্রকৃতিটি নিরীহ। তাঁকে অহমিকা প্রকাশ করতে বা খুব জোর দিয়ে কোন কথা বলতে শুনি নি। প্রায়ই

১২৫