পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

মনে খুসি ছিলেন না। এর কারণ অনুমান করাও কঠিন নয়। তিনিও রবীন্দ্রনাথের সতীর্থ, একই গুরুর কাছে হাত মক্স করেছেন, অথচ রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কত পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন! সহশিল্পীর এই ঈর্ষা স্বাভাবিক বটে, কিন্তু এথেকে সাহিত্যক্ষেত্রে স্তূপীকৃত হয়ে ওঠে বহু আবর্জনাই। এই ঈর্ষার দ্বারা চালিত হয়েই দ্বিজেন্দ্রলাল প্রকাশ্যে করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ। অক্ষয়কুমারের অতটা সাহস ছিল না। কিন্তু যে সব বৈঠকে ঘটা ক’রে রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশে ধূলো-কাদা ছোঁড়া হ’ত, তিনি সেই সব স্থানে হাজিরা দিতে ভালোবাসতেন। দ্বিজেন্দ্রলালের বৈঠকে আমি কত লোককে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে কত অমূলক কথাই বলতে শুনেছি! কেউ বলতেন, তিনি সংস্কৃত না জেনেও জানবার ভান করেন, কেউ বলতেন, তিনি ইংরেজী লিখতে পারেন না।

 রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে অক্ষয়কুমারকে এরকম মন্তব্য প্রকাশ করতে শুনি নি বটে, কিন্তু একাধিকবার বলতে শুনেছি: ‘দেখ, রবিবাবু যে ভালো ভালো কবিতা লিখেছেন তাতে আর সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি এত বেশী বাজে কবিতাও লিখেছেন সাহিত্যের মধ্যে সেগুলির স্থান হবে না।’ সঙ্গে সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নিজে রবীন্দ্রনাথের মত বাজে কবিতা লেখেন নি এবং সেইজন্যেই বেশী কবিতা লেখার পক্ষপাতী নন। বেশী লিখলেই বাজে লিখতে হয়।

 কিন্তু অক্ষয়কুমার কোনদিন বোধ হয় এ হিসাব ক’রে দেখেন নি যে, রবীন্দ্রনাথ এমন অসংখ্য শ্রেষ্ঠ কবিতা রচনা করেছেন, যার তুলনায় তাঁর নিজের জীবনব্যাপী সাহিত্যশ্রমের দান মুষ্টিমেয় ব’লেই গণ্য হ’তে পারে।

 অক্ষয়কুমারের মুখেই বঙ্কিম-যুগের একটি গল্প শুনেছি। কবি নবীনচন্দ্র সেনের সামনে কেউ রবীন্দ্রনাথকে বড় কবি বললে তিনি

১২৭