পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

স্থির করলুম, অনাহূত হয়েই জলধরবাবুর বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে বেশ খানিকটা অপ্রতিভ ক’রে আসব। বলা বাহুল্য, মাটির মানুষ জলধরদা ছাড়া আর কোন দাদা বা কাকা বা জ্যাঠার বাড়ীতে আমি এমন রবাহূতের মত গমন করতে পারতুম না। যথাসময়ে যথাস্থানে গিয়ে হাজির। জলধরবাবুর সঙ্গে দেখা। বললুম, ‘দাদা, আপনি আমাকে ভুলতে পারেন, কিন্তু আমি আপনাকে ভুলতে পারলুম না লুচি-মণ্ডা খেতে এসেছি বিনা নিমন্ত্রণেই।’

 জলধরবাবু একটুও অপ্রস্তুত হ’লেন না, হো-হো রবে উচ্চহাস্য ক’রে প্রায় আমাকে আলিঙ্গন করেন আর কি! তারপর ত্রুটিস্বীকার ক’রে বললেন, ‘ভুল হয়ে গেছে ভায়া, ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু তুমি এসেছ ব’লে বড় সুখী হয়েছি, বড় সুখী হয়েছি।’

 এমনি আরো কত গল্প আছে। কিন্তু বেশী গল্প বলবার জায়গা কোথায়?

 এমন মানুষের পিছনেও লোকে লাগতে ছাড়ে নি। যে-সে লোক নয়, তাঁর পরম বন্ধু এবং ছাত্র দীনেন্দ্রকুমার রায় পর্যন্ত। জীবনসন্ধ্যায় যখন মহাপ্রস্থানের সময় প্রায় আগত, ছাপার হরফে দীনেন্দ্রবাবু রটিয়ে দিলেন, জলধরবাবুর “হিমালয়ে”র লেখক হচ্ছেন তিনিই। কিন্তু এ যে কত-বড় মিথ্যাকথা, লোকের তা বুঝতে বিলম্ব হয় নি। “হিমালয়ে”র মধ্যেই আছে তার আভ্যন্তরিক প্রমাণ। জলধরবাবুর একটি সম্পূর্ণ নিজস্ব ‘ষ্টাইল’ ছিল, দীনেন্দ্রকুমারের ‘ষ্টাইলে’র সঙ্গে যার কিছুমাত্র মিল নেই। সাহিত্যিকদের ‘ষ্টাইল’ হচ্ছে তাঁদের স্বাক্ষরেরই সমান, বিশেষজ্ঞদের চক্ষে তা ধরা পড়বেই। আসলে বন্ধুর খ্যাতি, তাঁর প্রতিষ্ঠা, রাজদ্বারে তাঁর সম্মান দেখে প্রায়-নির্বাপিত দীনেন্দ্রবাবুর মনে জেগে উঠেছিল দারুণ ঈর্ষা।

১৬৩