পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

গান শেখানো চলে? শেষটা কি আমার অন্ন মারা যাবে?’

 আমি হেসে বললুম, ‘নজরুল খুব বেশী অন্যায় করেছে ব’লে মনে হয় না। সে তো গায়ক হবার জন্যে তোমার কাছে গান শিখতে চায় নি। সে চেয়েছিল কেবল নতুন নতুন সুর শিখতে, নিজের কাজে লাগাবে ব’লে। এটা তোমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।’

 পরদিনই জমীর আমার বাড়ীতে এসে হাজির। আমাকে কয়েকটি উর্দু গান শোনালেন। গানের কথাগুলি কাগজে টুকে নিয়ে আমি বললুম, ‘হপ্তাখানেক পরে এসে গান নিয়ে যেও।’

 জমীর বললেন, ‘আমি কেবল গান নিতে আসব না, সেদিন আপনাকে ভালো ক’রে গান শুনিয়েও যাব। শুনতে পাই, আপনার বাড়ীতে প্রায়ই গানের আসর বসে, নামজাদা গাইয়েরা আসেন, কিন্তু কোনদিনই তো আপনি এই গরীবকে স্মরণ করেন না।’

 জমীরের কণ্ঠে অভিমানের সুর। বললুম, ‘ভাই, বড় বড় গাইয়েদের অনেকেই আমার এখানে এসে গান গেয়ে যান বটে, তবে তাঁরা আসেন দয়া ক’রে, কেবল ভালোবাসার খাতিরে। কিন্তু তোমাকে ডাকি কেমন ক’রে, উচিতমত দক্ষিণা দেবার ক্ষমতা তো আমার নেই!’

 জমীর বললেন, ‘কেন দাদা, আমিও কি আপনাকে ভালোবাসতে পারি না? আমি কি কেবল টাকার খাতিরেই গান গাই? মনের মত সমঝদার পেলে টাকার কথা আমার মনেও ওঠে না। এবার থেকে আমিও এখানে গান গাইতে আসব। কেবল আমাকে একটু রঙিন ক’রে দিলেই চলবে, রঙিন না হ’লে আমার গান খোলে না।’

১৬৯