পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

এতদিনেও একটুও পরিবর্তিত হন নি—অন্তত আমার কাছে।

 অবশেষে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হেমেন্দ্র, তুমি চমৎকার জায়গায় বাড়ী করেছ। কলকাতায় থেকেও তুমি কলকাতায় নেই, চোখের সামনে সর্বদাই দেখছ গঙ্গার জীবন্ত জলের ধারা। এমন সৌভাগ্য হয় কম লোকেরই। আচ্ছা, এইবারে তোমার বাড়ীর ঘরগুলো দেখাও দেখি।’

 তাঁকে তিনতলার, দোতলার ও একতলার প্রত্যেক ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলুম। তিনি যে বিশেষ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলো পরীক্ষা করছেন, এটা বুঝতে পারলুম।

 তারপর তিনি যেন নিজের মনে মনেই বললেন, ‘এ বড় অন্যায় তো!’

 জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কি অন্যায় দাদা?’

 তিনি বললেন, ‘তোমার এক বিশেষ ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেদিন আমার কাছে অভিযোগ ক’রে এলেন, ‘হেমেন্দ্রের ঘরে ঘরে টাঙানো অশ্লীল, নগ্ন মূর্তির ছবি। চোখ তুলে তাকানো যায় না।’ কিন্তু আমি তোমার বাড়ীতে এসে একখানা অশ্লীল ছবিও তো দেখতে পাচ্ছি না! এ সব তো উঁচুদরের আর্ট, এ দেখে যার মনে অপবিত্র ভাব জাগে, তারই মন শ্লীল নয়।’

 শরৎচন্দ্র যথার্থ শিল্পী, তাই তিনি এই পরম সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। শ্রেষ্ঠ আর্ট কোনদিনই অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয় না। গ্রীক ভাস্কররা নগ্ন মূর্তি গড়তেন বটে, কিন্তু অশ্লীল মূর্তি গড়তেন না।

 শরৎচন্দ্র আমার সেই বিশেষ ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম প্রকাশ করেন নি। কিন্তু পরে গিরিজাকুমারের মুখে তাঁর নাম আমি শুনেছিলুম। তিনি বাংলাদেশের একজন অতিপরিচিত কবি। এখন স্বর্গত।

১৯৩