পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

মাঝে। একদিন আমাকে তিনি বললেন, ‘সাহিত্যে দুরাত্মার ছবি আঁকা উচিত নয়। পৃথিবীতে দুরাত্মা আছে তো অসংখ্য, তাদের আবার সাহিত্যক্ষেত্রে টেনে আনা কেন?’

 আমি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলুম, তিনি নিজেই দুরাত্মার ছবি এঁকেছেন। তিনি আর কিছু বললেন না।

 আর একদিন আমাকে বললেন, ‘হেমেন্দ্র, কখনও অনুবাদ কোরো না, ওটা হচ্ছে পণ্ডশ্রম।’

 আমি বললুম, ‘আমার পক্ষে হয় তো ওটা খানিকটা পণ্ডশ্রমই বটে, কিন্তু অনুবাদের যথেষ্ট সার্থকতা আছে। অনুবাদের সাহায্যে যে কোন সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ক’রে তোলা যায়।’

 তবু তিনি বললেন, ‘না, অনুবাদ করা আমি পছন্দ করি না।’

 শেষের দিকে শরৎচন্দ্রের মত বদলেছিল বটে, কিন্তু গোড়ার দিকে তিনিও অনুবাদ করতে ছাড়েন নি। তাঁর দ্বারা দু’খানি ইংরেজী উপন্যাস অনূদিত হয়েছিল। “ইষ্টলিন” অবলম্বনে “অভিমান” এবং “মাইটি অ্যাটম” অবলম্বনে “পাষাণ”। এই দুটি রচনার পাণ্ডুলিপি এখন কার কাছে আছে তা জানি না, কিন্তু প্রকাশ করলে নিশ্চয়ই কৌতূহলী পাঠকের অভাব হবে না।

 শরৎচন্দ্রের লেখা সহজ, সরল এবং পড়বার সময়ে মনে হয় যেন তা স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু আমি একাধিকবার রচনায় নিযুক্ত শরৎচন্দ্রকে দেখবার সুযোগ পেয়েছি। তিনি অনায়াসে তাড়াতাড়ি লিখতে পারতেন না। একবার ধীরে ধীরে লিখতেন, আবার জায়গায় জায়গায় লেখা কাটতেন, আবার কলম থামিয়ে চুপ ক’রে ভাবতেন, সে সময়ে বোধ হ’ত মনে মনে তিনি যেন কষ্টভোগ করছেন। তাঁর লেখার আরো কিছু কিছু বিশেষত্ব ছিল। তিনি খুব দামী ও ভালো কাগজ ব্যবহার করতেন।

১৯৯