পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

বটে, কিন্তু বাইরে মনে মনে আমাদের ঘৃণা করেন। তাই তফাতে থেকেই মান বাঁচাতে চাই।’

 আজ জীবিত থাকলে গিরিশচন্দ্র দেখতে পেতেন, স্রোত বদলে গেছে। বাঙালী অভিনেতারা আজ আর ঘৃণ্য জীব নন।

 অভিনয়ের ঘণ্টা বাজল। বিদায় নিয়ে আসছি, তিনি ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখনো নাটক-টাটক লেখে। নাকি?’

 —‘আজ্ঞে না, আপনার উপদেশ ভুলি নি। ত্রিশ বৎসর বয়সের আগে নাটক তো লিখবই না, পরেও কখনো লিখব কিনা জানি না।’

 তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় কাশীধামের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে। ১৩১৫ কি ১৩১৬ খৃষ্টাব্দের কথা। হাঁপানি পীড়ার আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করবার জন্যে তিনি কলকাতা ত্যাগ করেছিলেন। অপরাহ্ণকালে তাঁর কাছে গিয়ে দেখি, কয়েকজন রোগীকে তিনি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিচ্ছেন। খানিক পরে বৈঠকে এসে বসলেন ওখানকার কয়েকজন গণ্যমান্য লোক— কারুকেই চিনি না। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হ’ল, গিরিশচন্দ্র কখনো শোনেন, কখনো ধীর-স্থির ভাবে আলোচনায় যোগ দেন।

 গিরিশচন্দ্রের সংলাপে সেদিন একটি জিনিষ লক্ষ্য করেছিলুম। তাঁর মতামতের সঙ্গে যুক্তির সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পরে জেনেছি, কেবল আলোচনা নয়, তাঁর তর্ক করবার শক্তিও ছিল অসাধারণ। পরিব্রাজক ও প্রচারকরূপে পৃথিবী জুড়ে বিজয়-ডঙ্কা বাজিয়ে এসেছেন যে তীক্ষ্ণধী স্বামী বিবেকানন্দ, তর্কযুদ্ধে তিনিও গিরিশচন্দ্রকে এঁটে উঠতে পারতেন না। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার কেবল বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন না, দখল ছিল তাঁর নানা শাস্ত্রের উপরে। তিনিও তর্কের শেষে গিরিশচন্দ্রকে

২৭