পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 এই শ্রেণীর কথায় যে বক্তার intellect বা মনীষার পরিচয় পাওয়া যেতনা, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হ’ত সম্পূর্ণভাবেই, কারণ তিনি চাইতেন কেবল জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে এবং তাঁর এই সব গরম গরম বুলি জনতার মধ্যে যে উত্তেজনা ও উন্মাদনা জাগ্রত করত, বর্ণনার দ্বারা আজকের দিনে তা বুঝানো যাবে না।

 জনসাধারণের কাছ থেকে তিনি লাভ করেছিলেন যথেষ্ট শ্রদ্ধা, সম্মান, পূজা। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে তাঁর সমাদর আরো বেড়ে ওঠে। তখন তিনি ইংরেজী “বন্দে মাতরম্” পত্রিকার সম্পাদক। তাতে একটি প্রবন্ধ বেরুলো, গভর্মেণ্ট বললেন, সেটি রাজদ্রোহমূলক এবং অরবিন্দ তার লেখক। তখনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হ’ল। সম্পাদক বিপিনচন্দ্রকে আদালতে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, ‘অরবিন্দ ঐ প্রবন্ধটি লিখেছেন কিনা?’ বিপিনচন্দ্র উত্তর দিতে অস্বীকার করলেন। তিনি আদালতের অপমান করেছেন এই অজুহাতে তাঁর প্রতি ছয়মাস কারাবাসের হুকুম হ’ল।

 মুক্তিলাভের পর তাঁর জেল থেকে প্রত্যাগমনের পথগুলি হয়ে উঠল একেবারে জনাকীর্ণ। হাজার হাজার লোকের মুখে গগনভেদী জয়ধ্বনি। কাতারে কাতারে লোক চারিদিক থেকে বিপুল আগ্রহে ছুটে আসতে লাগল একটিবার তাঁকে চোখে দেখবার জন্যে। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। পথে গাড়ী চলছে একখানি মাত্র, যার উপরে আছেন বিপিনচন্দ্র। তাঁকে দেখলুম খোলা গাড়ীর উপরে কৃতাঞ্জলিপুটে দাঁড়িয়ে সহাস্যমুখে তিনি গ্রহণ করছেন বিপুল জনতার অভিনন্দন। ফিরে এলেন তিনি বিজয়ী বীরের মত।

 কিন্তু কেবল জনতা-ক্ষ্যাপানো তপ্ত বক্তৃতা নয়, বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশ্রেণীর বক্তৃতাতেও তিনি নিজের চিন্তাশীলতার প্রকৃষ্ট পরিচয়

৯৬