পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV যাত্রাবদল শান্তিরামও হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে আমার সামনের বেঞ্চিতে মুখোমুখি হয়ে বসলো । খানিকটা ঠাণ্ডা হয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললে-বিড়ি আছে ? কিনতে ভুলে গেলাম তাড়াতাড়িতে। আর ক’মিনিট আছে ? পৌনে ছ’টা না রেলওয়ে ? আমি ছুটুচি সেই বাজার থেকে-আর ঐ ভারী বোচক ! প্ৰাণ একেবারে বেরিয়ে গিয়েচে । কলকাতায় বাস করা গিয়েচে ভাই, শনিবারে শনিবারে বাড়ি আসি। বাগানের কলাটা, মূলোটা যা পাই নিয়ে যাই এসো-সেখানে তো সবই হু-হু-বুঝলে না ? দাতন-কাঠিটা এস্তেক তাও নগদ পয়সা। প্ৰায় তিনচার দিনের বাজার খরচ বেঁচে যায়। এই দ্যাখো, ওল, পুই শাক, কঁচা লঙ্কা, পাটালি-দেখি দেশলাইট-শান্তিরামকে পেয়ে খুশী হ’লাম। শান্তিরামের স্বভাবই হচ্চে একটু বেশী বকা ৷ কিন্তু তার বকুনি আমার শুনতে ভাল লাগে। সে বকুনির ফাঁকে ফাকে এমন সব পাড়াগায়ের ঘটনার টুকরো ঢুকিয়ে দেয়, যা, গল্প লেখায় চমৎকার-অতি চমৎকার উপাদান । ওর কাছে শোনা ঘটনা নিয়ে দু-একটা গল্প লিখেচিও এর আগে । মনে ভাবলাম, শান্তিরাম এসেচে, ভালই হয়েচে, একা চার ঘণ্টার রাস্ত যাব, তাতে এই শীত । তা ছাড়া এই শীতে ওরা মুখের গল্প জমবেও ভাল । হঠাৎ শান্তিরাম প্লাটফর্মের দিকে মুখ বাড়িয়ে ডাকতে লাগল-অবনী ও অবনী, এই যে, এই গাড়ীতে এস কোথায় যাবে ? গুটি তিন-চার ছেলেমেয়ে এক পচিশ ছাব্বিশ বছরের স্বাস্থ্যবতী ও সুশ্ৰী একটি পাড়াগায়ের বৌ আগে আগে, পিছনে একটি ফর্সা একহার চেহারার লোক, সবার পিছনে বাক্স পেটরা মাথায় জন দুই কুলি । লোকটি আমাদের কামরার কাছে এসে দাড়িয়ে হেসে বললে-এই যে দাদা, কলকাতা, ফিরচেন আজই। আমি ? আমি একবার এদের নিয়ে যাচ্চি পাচঘরার ঠাকুরের থানে । মসলন্দপুর ষ্টেশনে নেমে যেতে হবে ; বাস পাওয়া যায়। দলটি