পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 যাত্রাবদল তখন তাদের অবস্থা খুব ভাল ছিল না। পূৰ্ণবাবুদের পৈতৃক বাড়িও নেই কলকাতায়, ভবানীপুরে খুব আগে নাকি প্ৰকাণ্ড বাড়ি পুকুর ছিল, এখন তাদের দুপুরুষ ভাড়াটে বাড়িতে থাকে । *পূৰ্ণবাবুর আঠার উনিশ বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হয়, তিনি ছেলের জন্যে শুধু যে কিছু রেখে যাননি তা নয়, ছেলেটিকে লেখাপড়াও শেখান নি। কারণ তিনিও জানতেন এবং সবাই জানত যে তার দরকার নেই, অত বড় সম্পত্তির যে মালিক হবে দু-দিন পরে তার কি হবে লেখাপড়ায় ? ছেলেটিও জ্ঞান হওয়া পৰ্য্যন্ত তাই জানত ব’লে লেখাপড়া শেখবার কোন চেষ্টাও ছিল না। পূৰ্ণবাবুর শ্বশুর। তাই ভেবে মেয়েকে ঐ গরীব ঘরে দিয়েছিলেন। পূৰ্ণবাবুর বাবা তো মারা গেলেন, পূৰ্ণবাবুর ঘাড়ে রেখে গেলেন সংসার, নববিবাহিত পুত্ৰবধু অল্প কিছু দেন। কিন্তু পূৰ্ণবাবুর ক্রেডিট তখন পুরোমাত্রায়কি বাজারে কি বন্ধুবান্ধব মহলে। টাকা হােত পাতিলেই পাওয়া যায়-ধারে দোকানে জিনিষ পাওয়া যায়, নিত্য নূতন বন্ধু জোটে। পূৰ্ণবাবু, খুশী, পূর্ণবাবুর তরুণী বেৰী খুশী, আত্মীয়-স্বজন খুশী, বন্ধুবান্ধব খুশী। কারণ, সবাই জানে বুড়ী আর ক’দিন ? না হয় মেরে কেটে আর পাচটা বছর ! অবিশ্যি পূৰ্ণবাবুর তখন বয়স অনেক কম, সংসারের কিছুই বোঝেন না, জানেন না-মনে উৎসাহ, আশা অদম্য, আনন্দের উৎস-চোখের সামনে দীপ্ত রভীন ভবিষ্যৎ-যে ভবিষ্যতের সম্বন্ধে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, আশঙ্কা নেই, যা একদিন হাতের মুঠোয় ধরা দেবেই-এ অবস্থায় যে যা বুঝিয়েচে পূর্ণবাবু তাই-ই বুঝেচেন, টাকাকড়ি ধার ক’রে দু-হাতে উড়িয়েচেন, বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যও করেচেন, ধারে যতদিন এবং যতটা নবাবি করা চলে, বাকী রাখেন নি। কিন্তু ক্ৰমে বছর যেতে লাগল, দু-তিন বছর পরে আজ ধার মেলে নাসকলেই হাত গুটিয়ে ফেললে । পাওনাদারের যাতায়াত সুরু হ’ল-এইজন্যে আরও বিশেষ ক’রে পুর্ণবাবু বাজারে ক্রেডিট হারিয়ে ফেললেন যে সবাই দেখলে