পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 কিন্তু আজ এ-গান শূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পৌঁছল না কোথাও। এই শূন্যতায় কুমুর মন ভয়ে ভরে উঠল। আজ থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনের গভীর আকাঙ্ক্ষা কি ওই ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতই কেবল সঙ্গিহীন নিঃশ্বসিত হয়ে উঠবে?

 মােতির মা দূরে পিছনে বসে রইল। সকালের নির্মল আলােয় নির্জন ছাদে এই অসজ্জিত সুন্দরীর মহিমা ওকে বিস্মিত করে দিয়েছে। ভাবছে, এ-বাড়িতে ওকে কেমন করে মানাবে? এখানে যেসব মেয়ে আছে এর তুলনায় তারা কোন্ জাতের? তারা আপনি ওর থেকে পৃথক হয়ে পড়েছে, ওর উপরে রাগ করছে কিন্তু ওর সঙ্গে ভাব করতে সাহস করছে না।

 বসে থাকতে থাকতে মােতির মা হঠাৎ দেখলে কুমু দুই হাতে তার ওড়নার আঁচল মুখে চেপে ধরে কেঁদে উঠেছে। ও আর থাকতে পারলে না, কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, “দিদি আমার, লক্ষ্মী আমার, কী হয়েছে বলো আমাকে।”

 কুমু অনেকক্ষণ কথা কইতে পারলে না। একটু সামলে নিয়ে বললে, “আজও দাদার চিঠি পেলুম না, কী হয়েছে তাঁর বুঝতে পারছি নে।”

 “চিঠি পাবার কি সময় হয়েছে ভাই?”

 “নিশ্চয় হয়েছে। আমি তাঁর অসুখ দেখে এসেছি। তিনি জানেন, খবর পাবার জন্যে আমার মনটা কী রকম করছে।”

 মােতির মা বললে, “তুমি ভেবাে না, খবর নেবার আমি একটা-কিছু উপায় করব।”

 কুমু টেলিগ্রাফ করবার কথা অনেকবার ভেবেছে, কিন্তু কাকে দিয়ে করাবে। যেদিন মধুসূদন নিজেকে ওর দাদার মহাজন

১০৫