পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

8

 পুরোনাে ধনী-ঘরে পুরাতন কাল যে-দুর্গে বাস করে তার পাকা গাঁথুনি। অনেক দেউড়ি পার হয়ে তবে নতুন কালকে সেখানে ঢুকতে হয়। সেখানে যারা থাকে নতুন যুগে এসে পৌঁছােতে তাদের বিস্তর লেট হয়ে যায়। বিপ্রদাসের বাপ মুকুন্দলালও ধাবমান নতুন যুগকে ধরতে পারেন নি।

 দীর্ঘ তাঁর গৌরবর্ণ দেহ, বাবরি-কাটা চুল, বড়ো বড়াে টানা চোখে অপ্রতিহত প্রভুত্বের দৃষ্টি। ভারি গলায় যখন হাঁক পাড়েন, অনুচর-পরিচরদের বুক থর্ থর্ করে কেঁপে ওঠে। যদিও পালােয়ন রেখে নিয়মিত কুস্তি করা তাঁর অভ্যাস, গায়ে শক্তিও কম নয়, তবু সুকুমার শরীরে শ্রমের চিহ্ন নেই। পরনে চুনট-করা ফুরফুরে মসলিনের জামা, ফরাসডাঙা বা ঢাকাই ধুতির বহুযত্নবিন্যস্ত কোঁচা ভূলুণ্ঠিত, কর্তার আসন্ন আগমনের বাতাস ইস্তাম্বুল আতরের সুগন্ধবার্তা বহন করে। পানের সােনার বাটা হাতে খানসামা পশ্চাদ্‌বর্তী, দ্বারের কাছে সর্বদা হাজির তকমাপরা আরদালি। সদর-দরজায় বৃদ্ধ চন্দ্রভান জমাদার তামাক মাখা ও সিদ্ধি কোটার অবকাশে বেঞ্চে বসে লম্বা দাড়ি দুই ভাগ করে বার বার আঁচড়িয়ে দুই কানের উপর বাঁধে, নিয়তন দারােয়ানরা তলােয়ার হাতে পাহারা দেয়। দেউড়ির দেওয়ালে ঝােলে নানারকমের ঢাল, বাঁকা তলােয়ার, বহুকালের, পুরানাে বন্দুক বল্লম, বর্শা।

 বৈঠকখানায় মুকুন্দলাল বসেন গদির উপর, পিঠের কাছে তাকিয়া। পারিষদেরা বসে নিচে, সামনে বাঁয়ে দুই ভাগে। হুঁকাবরদারের জানা আছে এদের কার সম্মান কোন্ রকম হুঁকোয় রক্ষা হয়, বাঁধানাে, আবাঁধানাে, না, গুড়গুড়ি। কর্তামহারাজের জন্যে বৃহৎ আলবােলা, গােলাপজলের গন্ধে সুগন্ধি।

১৫