পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কুমুর প্রতি আকর্ষণ দুর্নিবার বেগে প্রবল হয়ে ওঠে। আজ কুমুকে দেখে মধুসূদন স্পষ্টই বুঝলে, কুমু তৈরি হয়ে আসে নি—একটা অদৃশ্য আড়ালের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু, কী সুন্দর। কী একটা দীপ্যমান শুচিতা, শুভ্রতা। যেন নির্জন তুষারশিখরের উপরে নির্মল উষা দেখা দিয়েছে।

 মধুসূদন একটু কাছে এগিয়ে এসে ধীর স্বরে বলল, “শুতে আসবে না বড়োবউ?”

 কুমু আশ্চর্য হয়ে গেল। সে নিশ্চয় মনে করেছিল, মধুসূদন রাগ করবে, তাকে অপমানের কথা বলবে। হঠাৎ একটা চিরপরিচিত সুর তার মনে পড়ে গেল—তার বাবা স্নিগ্ধ গলায় কেমন করে তার মাকে বড়োবউ বলে ডাকতেন। সেই সঙ্গেই মনে পড়ল, মা তার বাবাকে কাছে আসতে বাধা দিয়ে কেমন করে চলে গিয়েছিলেন। এক মুহূর্তে তার চোখ ছলছলিয়ে এল—মাটিতে মধুসূদনের পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে উঠল, “আমাকে মাপ করো।”

 মধুসূদন তাড়াতাড়ি তার হাত ধরে তুলে চৌকির উপরে বসিয়ে বললে, “কী দোষ করেছ যে তোমাকে মাপ করব?”

 কুমু বললে, “এখনও আমার মন তৈরি হয় নি। আমাকে একটুখানি সময় দাও।”

 মধুসূদনের মনটা শক্ত হয়ে উঠল; বললে, “কিসের জন্যে সময় দিতে হবে বুঝিয়ে বলো।”

 “ঠিক বলতে পারছি নে, কাউকে বুঝিয়ে বলা শক্ত—”

 মধুসূদনের কণ্ঠে আর রস রইল না। সে বললে, “কিছুই শক্ত না। তুমি বলতে চাও, আমাকে তোমার ভালো লাগছে না।”

 কুমুর পক্ষে মুশকিল হল। কথাটা সত্যি অথচ সত্যি নয়। হৃদয়

১৫২