পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 কুমুর চোখে জল এল, বললে, “আমার এমন ভাগ্য যদি হয় তো বেঁচে যাই।”

 বিপ্রদাস মধুসূদনের চিঠি হাতে রাখলে, উত্তর দিলে না।

৫৬

 দুদিন পরেই নবীন, মোতির মা, হাবলুকে নিয়ে এসে উপস্থিত। হাবলু জেঠাইমার কোলে চড়ে তার বুকে মাথা রেখে কেঁদে নিলে। কান্নাটা কিসের জন্যে স্পষ্ট করে বলা শক্ত— অতীতের জন্যে অভিমান, না বর্তমানের জন্যে আবদার, না ভবিষ্যতের জন্যে ভাবনা?

 কুমু হাবলুকে জড়িয়ে ধরে বললে, “কঠিন সংসার, গোপাল, কান্নার অন্ত নেই। কী আছে আমার, কী দিতে পারি, যাতে মানুষের ছেলের কান্না কমে। কান্না দিয়ে কান্না মেটাতে চাই, তার বেশি শক্তি নেই। যে-ভালোবাসা আপনাকে দেয় তার অধিক আর কিছু দিতে পারে না, বাছারা, সেই ভালোবাসা তোরা পেয়েছিস; জেঠাইমা চিরদিন থাকবে না, কিন্তু এই কথাটা মনে রাখিস, মনে রাখিস, মনে রাখিস।” বলে তার গালে চুমু খেলে।

 নবীন বললে, “বউরানী, এবার রজবপুরে পৈতৃক ঘরে চলেছি; এখানকার পালা সাঙ্গ হল।”

 কুমু ব্যাকুল হয়ে বললে, “আমি হতভাগিনী এসে তোমাদের এই বিপদ ঘটালুম।”

 নবীন বললে, “ঠিক তার উলটো। অনেক দিন থেকেই মনটা যাইযাই করছিল। বেঁধে-সেধে তৈরি হয়ে ছিলুম, এমন সময় তুমি এলে আমাদের ঘরে। ঘরের আশ খুব করেই মিটেছিল, কিন্তু বিধাতার সইল না।”

২৯২