পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

আগুন। এ কী আস্পর্ধা! আমরা হলুম জমিদার, এর মধ্যে উনি ওঁর মধুপুরী খাড়া করেন কোথা থেকে?

 এদিকে ভােজের আয়ােজনটা খুব ব্যাপকরূপেই সকলের কাছে প্রকাশমান হয়ে উঠল। সামান্য ফলার নয়। মাছ দই ক্ষীর সন্দেশ ঘি ময়দা চিনি খুব শোরগােল করে আমদানি। গাছতলায় মস্ত-মস্ত উনন পাতা; রান্নার জন্যে নানা আয়তনের হাঁড়ি হাঁড়া মালসা কলসী জালা; সারবন্দি গােরুর গাড়িতে এল আলু বেগুন কাঁচকলা শাকসবজি। আহারটা হবে সন্ধ্যের সময় বাঁধা রােশনাইয়ের আলােয়।

 এদিকে চাটুজ্যেদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভােজন। দলে দলে প্রজার মিলে নিজেরাই আয়ােজন করেছে। হিন্দুদের মুসলমানদের স্বতন্ত্র জায়গা। মুসলমান প্রজার সংখ্যাই বেশি—রাত না পােয়াতেই তারা নিজেরাই রান্না চড়িয়েছে। আহারের উপকরণ যত না হোক, ঘন ঘন, চাটুজ্যেদের জয়ধ্বনি উঠছে তার চতুর্গুণ। স্বয়ং নবগােপালবাবু বেলা প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত অভুক্ত অবস্থায় বসে থেকে সকলকে খাওয়ালেন। তার পরে হল কাঙালিবিদায়। মাতব্বর প্রজারা নিজেরাই দানবিতরণের ব্যবস্থা করলে। কলধ্বনিতে জয়ধ্বনিতে বাতাসে চলল সমুদ্রমন্থন।

 মধুপুরীতে সমস্তদিন রান্না বসেছে। গন্ধে বহুদূর পর্যন্ত আমােদিত। খুরি ভাঁড় কলাপাতা হয়েছে পর্বতপ্রমাণ। তরকারি ও মাছকোটার আবর্জনা নিয়ে কাকেদের কলরবের বিরাম নেই—রাজ্যের কুকুরগুলােও পরস্পর কামড়াকামড়ি চেঁচামেচি বাধিয়ে দিয়েছে। সময় হয়ে এল, রােশনাই জ্বলেছে, মেটিয়াবুরুজের রােশনচৌকি ইমনকল্যাণ থেকে কেদারা পর্যন্ত বাজিয়ে চলল। অনুচরপরিচরেরা থেকে-থেকে উদ্বিগ্নমুখে রাজাবাহাদুরের কানের কাছে ফিস ফিস করে জানাচ্ছে এখনও খাবার লােক যথেষ্ট এল না। আজ হাটের দিন, ভিন্ন এলেকা থেকে যারা

৫৩