পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “আহা কী সুপুরুষ! এমন কখনাে চক্ষে দেখি নি। ওই-যে গান শুনেছিলেম কীর্তনে—

গোরার রূপে লাগল রসের বান,—
ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদীয়ার পুরনারীর প্রাণ

আমার তাই মনে পড়ল।”

 মুহূর্তে কুমুর মন গলে গেল। মুখ আড় করে জানলার দিকে রইল চেয়ে,— বাইরের মাঠ বন আকাশ অশ্রুবাষ্পে ঝাপসা হয়ে গেল।

 মােতির মার বুঝতে বাকি ছিল না কোন্ জায়গায় কুমুর দরদ, তাই নানারকম করে ওর দাদার কথাই আলোচনা করলে। জিজ্ঞাসা করলে, বিয়ে হয়েছে কি না।

 কুমু বললে, “না।”

 মােতির মা বলে উঠল, “মরে যাই! অমন দেবতার মতো রূপ, এখনও ঘর খালি! কোন্ ভাগ্যবতীর কপালে আছে ওই বর?”

 কুমু তখন ভাবছে— দাদা গিয়েছিলেন সমস্ত অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে, কেবল আমারই জন্যে। তার পরে এঁরা একবার দেখতেও এলেন না! কেবলমাত্র টাকার জোরে এমন মানুষকেও অবজ্ঞা করতে সাহস করলেন! তাঁর শরীর এই জন্যেই বুঝি বা ভেঙে পড়ল।

 বৃথা আক্ষেপের সঙ্গে বার বার মনে-মনে বলতে লাগল— দাদা কেন গেল ইস্টেশনে। কেন নিজেকে খাটো করলে। আমার জন্যে? আমার মরণ হল না কেন?

 যে-কাজটা হয়ে গেছে, আর ফেরানাে যাবে না, তারই উপর ওর মনটা মাথা ঠুকতে লাগল। কেবলই মনে পড়তে লাগল, সেই রােগে-ক্লান্ত শান্ত মুখ, সেই আশীর্বাদে-ভরা স্নিগ্ধগম্ভীর দুটি চোখ।

৬৮