পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లు রবীন্দ্র-রচনাবলী তত্ত্বের বাৰ্দ্ধক্য। তত্ত্ব অর্থাৎ জ্ঞান পুরাতন হইয়া যায়, মৃত হইয়া যায়, মিথ্যা হইয়া যায়। আজ যে জ্ঞানটি নানা উপায়ে প্রচার করিবার আবশ্যক থাকে, কাল আর থাকে না, কাল তাহা সাধারণের সম্পত্তি হইয়া গিয়াছে, কাল যদি পুনশ্চ সে কথা উত্থাপন করিতে যাও তবে লোকে তোমাকে মারিতে আসে, বলে “আমি কি জাহাজ হইতে নামিয়া আসিলাম, না আমি কাল জন্মগ্রহণ করিয়াছি ?” জ্ঞান একটু পুরাতন হইলেই তাহার পুনরুক্তি আর কাহারও সহ্য হয় না। অনেক জ্ঞান কালক্রমে লোপ পায়, পরিবর্তিত হইয়া যায়, মিথ্যা হইয়া পড়ে। এমন একদিন ছিল যখন, আমরা শব্দ যে কানেই শুনি সৰ্ব্বাঙ্গ দিয়া শুনি না, এ কথাটাও নূতন সত্য ছিল। তখন এ কথাটা প্রমাণ দিয়া বুঝাইতে হইত। কিন্তু হৃদয়ের কথা চিরকাল পুরাতন এবং চিরকাল নূতন । বাল্মীকির সময়ে যে সকল তত্ত্ব সত্য বলিয়া প্রচলিত ছিল, তাহাদের অনেকগুলি এখন মিথ্যা বলিয়া স্থির হইয়াছে, কিন্তু সেই প্রাচীন ঋষি-কবি হৃদয়ের যে চিত্র দিয়াছেন, তাহার কোনটাই এখনও অপ্রচলিত হয় নাই । অতএব জ্ঞান কবিতার বিষয় নহে। কবিতা চিরযৌবন । এই বুড়ার সহিত বিবাহ দিয়া তাহাকে অল্প বয়সে বিধবা ও অতুমূতা করা উচিত হয় না। সৌন্দর্য্যের কাজ। প্রকৃতির উদ্দেশ্য—জানান নহে অনুভব করান। চারিদিক হইতে কেবল নানা উপায়ে হৃদয় আকর্ষণের চেষ্টা হইতেছে। যে জড়হৃদয় তাহাকেও মুগ্ধ করিতে হইবে, দিবানিশি তাহার কেবল এই যত্ন । তাহার প্রধান ইচ্ছা এই যে, সকলের সকল ভাল লাগে, এত ভাল লাগে যে আপনাকে বা অপরকে কেহ যেন বিনাশ না করে, এত ভাল লাগে যে সকলে সকলের অমুকুল হয়। কারণ এই ইচ্ছার উপর তাহার সমস্ত শুভ তাহার অস্তিত্ব নির্ভর করিতেছে। প্রথম অবস্থায় শাসনের দ্বারা প্রকৃতির এই উদ্দেশ্য সাধিত হয়। প্রথমে দেখিলে, জগৎকে ঘুষি মারিলে তোমার মুষ্টিতে গুরুতর আঘাত লাগে, ক্রমে দেখিলে জগতের সাহায্য করিলে সেও তোমার সাহায্য করে। এরূপ শাসনে এরূপ স্বার্থপরতায় জগতের রক্ষা হয় বটে, কিন্তু তাহাতে আনন্দ কিছুই নাই, তাহাতে জড়ত্ব ও দাসত্বই অধিক। এই জন্য প্রকৃতিতে যেমন শাসনও আছে তেমনি সৌন্দৰ্য্যও আছে। প্রকৃতির অভিপ্রায় এই, যাহাতে শাসন চলিয়া গিয়া সৌন্দর্ঘ্যের