পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WՉԵր রবীন্দ্র-রচনাবলী ২য়। অথচ দেখ, মনে হইতেছে প্রকৃতি কি শাস্ত ! ১ম | প্রকৃতি আমাদের সকলকে জানাইতে চায় যে, তোমরাই খুব মস্ত লোক— তোমরা আমাকে ছাড়াইয়া গিয়াছ । বিদ্যুৎমায়াবিনীকে তার দিয়া বাধিয়াছ— বাপ-দানবকে লৌহ-কারাগারে বাধিয়া তাহার দ্বারা কাজ উদ্ধার করিতেছ। প্রকৃতি যে অতি বৃহৎ কাৰ্য্যগুলি করিতেছে তাহ আমাদের কাছ হইতে কেমন গোপন করিয়া রাখিয়াছে, আর, আমরা যে অতি ক্ষুদ্র কাজটুকুও করি, তাহাই আমাদের চোখে কেমন দেদীপ্যমান করিয়া দেয় ! d ২য় । নহিলে, আমরা যদি প্রত্যক্ষ দেখিতে পাই অনন্তের কাজ চলিতেছে, তাহ হইলে কি আমরা আর কাজ করিতে পারি ! ১ম । কম কাজ ! বড় হইতে ছোট পৰ্য্যন্ত দেখ । অতি মহৎ শক্তিসম্পন্ন কত সহস্ৰ নক্ষত্র লোক, অথচ দেখ, তাহারা ছোট ছোট মাণিকের মত কেবল চিকচিক্‌ করিতেছে মাত্র! আমরা ফুলবাগানের মধ্যে বসিয়া আছি, মনে হইতেছে চারিদিকে যেন ছুটি । অথচ প্রতি গাছে পাতায় ফুলে ঘাসে অবিশ্রাম কাজ চলিতেছে— রাসায়নিক যোগ-বিয়োগের হাট বসিয়া গিয়াছে, কিন্তু দেখ, উহাদের মুখে গলদঘৰ্ম্ম পরিশ্রমের ভাব কিছুমাত্র নাই। কেবল সৌন্দৰ্য্য, কেবল বিরাম, কেবল শাস্তি ! আমি যখন আরাম করিতেছি, তখনো আমার আপাদমস্তকে কাজ চলিতেছে—আমার শরীরের প্রত্যেক কাজ যদি মেহন্নত করিয়া আমার নিজেকেই করিতে হইত তাহ হইলে কি আর জীবন ধারণ করিয়া সুখ থাকিত ! ২য় । প্রকৃতি বলিতেছে, আমি তোমার জন্য বিস্তর কাজ করিয়া দিতেছি, আর তুমি কি তোমার নিজের জন্য কিছু করিবে না ! জড়ের সহিত তোমার প্রভেদ এই যে, তোমার নিজের জন্য অনেক কাজ তোমার নিজেকেই করিতে হয়। তুমি পুরুষের মত আহার উপার্জন করিয়া আন, তার পরে সেটাকে পাকযন্ত্রে রাধিয়া লইবার অতি কৌশলসাধ্য কাৰ্য্যভার, সে আমার উপরে রহিল, তাহার জন্যে তুমি বেশী ভাবিও না। তুমি কেবল চলিবার উদ্যম কর, দেখিবে আমি তোমাকে চালাইয়া লইয়া যাইব । ১ম । ঠিক কথা, কিন্তু প্রকৃতি কখনো বলে না যে, আমি করিতেছি। আমাদের বেশীর ভাগ কাজ যে প্রকৃতি সম্পন্ন করিয়া দিতেছে, তাহা কি আমরা জানি ? আমাদের নিরুদ্যমে যে শতসহস্ৰ কাজ চলিতেছে, তাহা চলিতেছে বলিয়া আমাদের চেতনাই থাকে না । এই যে অতি কোমল বাতাস বহিতেছে, এই যে আমার চোখের সমুখে গঙ্গার ছোট ছোট তরঙ্গগুলি মৃদু মৃদু শা করিতে করিতে তটের উপরে মুহুমুহ