পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিখিলেশের আত্মকথা আমার নামে কাগজে প্যারাগ্রাফ এবং চিঠি বেরোতে শুরু হয়েছে—শুনছি একটা ছড়া এবং ছবি বেরোবে তারও উদযোগ হচ্ছে রসিকতার উংস খুলে গেছে, সেই সঙ্গে অজস্র মিথ্যেকথার ধারাবর্ষণে সমস্ত দেশ একেবারে পুলকিত। জানে যে এই পঙ্কিল রসের হোরিখেলায় পিচকিরিটা তাদেরই হাতে—আমি ভদ্রলোক রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলেছি, আমার গায়ের আবরণ থানা সাদা রাখবার উপায় নেই। লিখেছে, আমার এলেকায় আপামর সাধারণ সকলেই স্বদেশীর জন্যে একেবারে উৎসুক হয়ে রয়েছে কেবল আমার ভয়েই কিছু করতে পারছে না,-দুই-এক জন সাহসী যারা দিশি জিনিস চালাতে চায়, জমিদারি চালে আমি তাদের বিধিমতে উৎপীড়ন করছি। পুলিসের সঙ্গে আমার তলে তলে যোগ আছে, ম্যাজিস্টেটের সঙ্গে আমি গোপনে চিঠি-চালাচালি করছি এবং বিশ্বস্তস্থত্রে খবরের কাগজ খবর পেয়েছে যে, পৈতৃক খেতাবের উপরেও স্বেপোজিত খেতাব যোগ করে দেবার জন্তে আমার আয়োজন ব্যর্থ হবে না। লিখেছে, “স্বনাম পুরুষো ধন্য, কিন্তু দেশের লোক বিনামার ফরমাশ দিয়াছে, সে-খবরও আমরা রাখি।” আমার নামটা স্পষ্ট করে দেয় নি, কিন্তু বাইরের অস্পষ্টতার ভিতর থেকে সেটা খুব বড়ো করে ফুটে উঠেছে । এদিকে মাতৃবংসল হরিশ কুণ্ডুর গুণগান করে কাগজে চিঠির পর চিঠি বেরোচ্ছে । লিখেছে, মায়ের এমন সেবক দেশে যদি বেশি থাকত তাহলে এতদিনে ম্যাঞ্চেস্টারের কারখানা-ঘরের চিমনিগুলো পর্যন্ত বন্দেমাতরমের স্বরে সমস্বরে রামশিঙে ফুকতে থাকত । এদিকে আমার নামে লাল কালিতে লেখা একখানা চিঠি এসেছে, তাতে খবর দিয়েছে কোথায় কোথায় কোন কোন লিভারপুলের নিমকহালাল জমিদারের কাছারি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । বলেছে, ভগবান পাবক এখন থেকে এই পাবনের কাজে লাগলেন ; মায়ের যারা সস্তান নয় তারা যাতে মায়ের কোল জুড়ে থাকতে না পারে তার ব্যবস্থা হচ্ছে । নাম সই করেছে, "মায়ের কোলের অধম সরিক, শ্ৰী অম্বিকাচরণ গুপ্ত ।” আমি জানি, এই সমস্তই আমার এখানকার সব ছাত্রদের রচনা । আমি ওদের দুই-একজনকে ডেকে সেই চিঠিখানা দেখালুম । বি. এ. গম্ভীর ভাবে বললে, আমরাও শুনেছি, দেশে একদল লোক মরিয়া হয়ে রয়েছে, স্বদেশীর বাধা দূর করতে তার না করতে পারে এমন কাজ নেই।