পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©e 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কেন দিদি ? আমার ভয় হচ্ছিল এ গয়নার বাক্স নিয়ে পাছে তুমি বিপদে পড়–পাছে তোমাকে কেউ চোর বলে সন্দেহ করে ধরে । আমার সে ছ-হাজার টাকায় কাজ নেই। এখন আমার একটি কথা তোমাকে শুনতে হবে—এখনই তুমি বাড়ি যাও— যাও তোমার মায়ের কাছে । অমূল্য চাদরের ভিতর থেকে একটা পুটলি বের করে বললে, দিদি, ছ-হাজার টাকা এনেছি। জিজ্ঞাসা করলুম, কোথায় পেলে ? তার কোনো উত্তর না দিয়ে বললে, গিনির জন্তে অনেক চেষ্টা করলুম সে হল না, তাই নোট এনেছি। অমূল্য, মাথা খাও সত্যি করে বলে, এ-টাকা কোথায় পেলে ? সে আপনাকে বলব না । আমি চোখে যেন অন্ধকার দেখতে লাগলুম। বললুম, কী কাও করেছ অমূল্য ? এ টাকা কি— অমূল্য বলে উঠল, আমি জানি তুমি বলবে এ-টাকা আমি অন্যায় করে এনেছি— আচ্ছা তাই স্বীকার। কিন্তু যতবড়ো অন্যায় ততবড়োই দাম, সে-দাম আমি দিয়েছি । এখন এ-টাকা আমার । এ-টাকার সমস্ত বিবরণ আমার আর শুনতে ইচ্ছে হল না । শিরগুলো সংকুচিত হয়ে আমার সমস্ত শরীরকে যেন গুটিয়ে আনতে লাগল। আমি বললুম, নিয়ে যাও অমূল্য, এ-টাকা যেখান থেকে নিয়ে এসেছ এখনই সেখানে দিয়ে এস । সে যে বড়ো শক্ত কথা । না, শক্ত নয় ভাই। কী কুক্ষণে তুমি আমার কাছে এসেছিলে। সন্দীপও তোমার যতবড়ো অনিষ্ট করতে পারে নি আমি তাই করলুম! সন্দীপের নামটা যেন তাকে খোচা মারলে। সে বললে, সন্দীপ ! তোমার কাছে এলুম বলেই তো ওকে চিনতে পেরেছি। জান দিদি, তোমার কাছ থেকে সেদিন ও ষে ছ-হাজার টাকার গিনি নিয়ে গেছে তার থেকে এক পয়সাও খরচ করে নি। এখান থেকে গিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রুমাল থেকে সমস্ত গিনি মেজের উপর ঢেলে রাশ করে তুলে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বললে, এ টাকা নয়, এ ঐশ্বর্ধপারিজাতের পাপড়ি,—এ অলকাপুরীর বঁশি থেকে মুরের মতো ঝরে পড়তে পড়তে শক্ত হয়ে উঠেছে, একে তো ব্যাঙ্কনোটে ভাঙানো চলে না, এ যে মুন্দরীর কণ্ঠহার