পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9:శి রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশ্বাস করতে পার না। কাছারি লুঠ করবে এইটেই বা বিশ্বাস করতে কে পারত । কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে পুলিপিঠের মধ্যে নারকেলের পুর দিতে লাগলুম। আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে তিনি বললেন, যাই, ঠাকুরপোকে ডেকে পাঠাই, আমাদের সেই ছ-হাজার টাকাটা এখনই বের করে নিয়ে কলকাতায় পাঠাতে হবে, আর দেরি করা নয় । এই বলে তিনি চলে যেতেই আমি পিঠের বারকোশ সেইখানে আলগা ফেলে রেখে তাড়াতাড়ি সেই লোহার সিন্দুকের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলুম। আমার স্বামীর এমনি ভোলা-মন যে দেখি তার যে-জামার পকেটে চাবি থাকে সে-জামাটা তখনো আলনায় ঝুলছে। চাবির রিং থেকে লোহার সিন্দুকের চাবিটা খুলে আমার জ্যাকেটের মধ্যে লুকিয়ে ফেললুম। এমন সময় বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা পড়ল। বললুম, কাপড় ছাড়ছি – শুনতে পেলুম মেজোরানী বললেন, এই কিছু আগে দেখি পিঠে তৈরি করছে, আবার এখনই সাজ করবার ধুম পড়ে গেল। কত লীলাই যে দেখব। আজ বুঝি ওদের বন্দেমাতরমের বৈঠক বসবে । ওলো, ও দেবীচৌধুরানী, লুটের মাল বোঝাই হচ্ছে নাকি ? কী মনে করে একবার আস্তে আস্তে লোহার সিন্দুকটা খুললুম। বোধ হয় মনে ভাবছিলুম, যদি সমস্তটা স্বপ্ন হয় –যদি হঠাৎ সেই ছোটো দেরাজটা টেনে খুলতেই দেখি সেই কাগজের মোড়কগুলি ঠিক তেমনিই সাজানো রয়েছে । হায় রে, বিশ্বাসঘাতকের নষ্ট বিশ্বাসের মতোই সব শূন্ত । মিছামিছি কাপড় ছাড়তেই হল । কোনো দরকার নেই তবু নতুন করে চুল বাধকুম। মেজোরানীর সঙ্গে দেখা হতেই তিনি যখন জিজ্ঞাসা করলেন, বলি এত সাজ কিসের, আমি বললুম, জন্মতিথির । মেজোরানী হেসে বললেন, একটা কিছু ছুতো পেলেই অমনি সাজ । ঢের দেখেছি, তোর মতো এমন ভাবুনে দেখি নি । অমূল্যকে ডাকবার জন্যে বেহারার খোজ করছি এমন সময় সে এসে পেনসিলে লেখা একটি ছোটাে চিঠি আমার হাতে দিলে। তাতে অমূল্য লিখেছে, দিদি, খেতে ডেকেছিলে কিন্তু সবুর করতে পারলুম না। আগে তোমার আদেশ পালন করে আসি তার পরে তোমার প্রসাদ গ্রহণ করব । হয়তো ফিরে আসতে সন্ধ্যা হবে।