পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O&b’ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রয়োজনের বাড়, এইজন্য সে আমাদের অপমান দূর করিয়া দেয়। সৌন্দৰ আমাদের ক্ষুধাতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই সর্বদা একটা উচ্চতর স্বর লাগাইতেছে বলিয়াই, যাহারা একদিন অসংযত বর্বর ছিল, তাহারা আজ মানুষ হইয়া উঠিয়াছে,—যে কেবল ইঞ্জিয়েরই দোহাই মানিত, সে আজ প্রেমের বশ মানিয়াছে। আজ ক্ষুধা লাগিলেও আমরা পশুর মতো রাক্ষসের মতো যেমন-তেমন করিয়া খাইতে বসিতে . পারি না— শোভনতাটুকু রক্ষা না করিলে আমাদের খাইবার প্রবৃত্তিই চলিয়া যায়। অতএব এখন আমাদের খাইবার প্রবৃত্তিই একমাত্র নহে, শোভনতা তাহাকে নরম করিয়া আনিয়াছে । আমরা ছেলেকে লজ্জা দিয়া বলি, ছিছি আমন লোভীর মতো খাইতে আছে! সেরূপ খাওয়া দেখিতে কুহী । সৌন্দর্য আমাদের প্রবৃত্তিকে সংযত করিয়া আনিয়াছে । জগতের সঙ্গে আমাদের কেবলমাত্র প্রয়োজনের সম্বন্ধ না রাখিয়া আনন্দের সম্বন্ধ পাতাইয়াছে। প্রয়োজনের সম্বন্ধে আমাদের দৈন্ত, আমাদের দাসত্ব, আনন্দের সম্বন্ধেই আমাদের মুক্তি । তবেই দেখা যাইতেছে, পরিণামে সৌন্দর্য মানুষকে সংযমের দিকেই টানিতেছে । মানুষকে সে এমন একটি অমৃত দিতেছে যাহা পান করিয়া মানুষ ক্ষুধার রূঢ়তাকে দিনে দিনে জয় করিতেছে । অসংযমকে অমঙ্গল বলিয়া পরিত্যাগ করিতে যাহার মনে বিদ্রোহ উপস্থিত হয়, সে তাহাকে অস্বন্দর বলিয়া ইচ্ছা করিয়া ত্যাগ করিতে চাহিতেছে । সৌন্দর্য যেমন আমাদিগকে ক্রমে ক্রমে শোভনতার দিকে সংযমের দিকে আকর্ষণ করিয়া আনিতেছে, সংযমও তেমনি আমাদের সৌন্দর্যভোগের গভীরতা বাড়াইয়া দিতেছে। স্তব্ধভাবে নিবিষ্ট হইতে না জানিলে আমরা সৌন্দর্যের মৰ্মস্থান হইতে রস উদ্ধার করিতে পারি না। একপরায়ণা সতী স্ত্রীই তো প্রেমের যথার্থ সৌন্দর্য উপলব্ধি করিতে পারে, স্বৈরিণী তে পারে না । সতীত্ব সেই চাঞ্চল্যবিহীন সংযম, যাহার দ্বারা গভীরভাবে প্রেমের নিগুঢ় রস লাভ করা সম্ভব হয়। আমাদের সৌন্দর্যপ্রিয়তার মধ্যেও যদি সেই সতীত্বের সংযম না থাকে, তবে কী হয় ? সে কেবলই সৌন্দর্ধের বাহিরে বাহিরে চঞ্চল হইয়া ঘুরিয়া বেড়ায় ; মত্ততাকেই জাননা বলিয়া ভুল করে ; যাহাকে পাইলে সে একেবারে সব ছাড়িয়া স্থির হইয়া বসিতে পারিত, তাহাকে পায় না। যথার্থ সৌন্দৰ্য সমাহিত সাধকের কাছেই প্রত্যক্ষ, লোলুপ ভোগীর কাছে নহে। যে লোক পেটুক, সে ভোজনের রসজ্ঞ হইতে পারে না । পৌৰুরাজা ঋষিকুমার উতষ্ককে কহিলেন, যাও অন্তঃপুরে যাও, সেখানে