পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|9ట్రe রবীন্দ্র-রচনাবলী কেহ বলে বর্ণভেদের প্রথাই আমাদিগকে একেবারে মাটি করিয়া দিল। অথচ উভয় পক্ষেই বাস্তবসত্যের দোহাই দেয় । বস্তুত মাকুযঘটিত ব্যাপারে একই জায়গায় আমরা অনেক উলটা কাও দেখিতে পাই। মানুষের দেখা-অংশের মধ্যে যে-সকল বৈপরীত্য প্রকাশ পায়, মামুষের নদেখা অংশের মধ্যেই নিশ্চয় তাহার একটা নিগৃঢ় সমন্বয় আছে —অতএব আসল সত্যটা যে প্রত্যক্ষের উপরেই ভাসিয়া বেড়াইতেছে, তাহা নহে, অপ্রত্যক্ষের মধ্যেই ডুবিয়া আছে—এইজন্যই তাহাকে লইয়া এত তর্ক, এত দলাদলি এবং এইজন্তই একই ইতিহাসকে দুই বিরুদ্ধপক্ষে ওকালতনামা দিয়া থাকে। জগতের কলানিপুণ গুণীদের সম্বন্ধেও যেখানে আমরা উলটা কাও দেখিতে পাই, সেখানেও বাস্তবসত্যের বড়াই করিয়া হঠাৎ কিছু বিরুদ্ধ কথা বলিয়া বসা যায় না। সৌন্দর্যস্থষ্টি দুর্বলতা হইতে চঞ্চলত হইতে অসংযত হইতে ঘটিতেছে, এটা যে একটা অত্যন্ত বিরুদ্ধ কথা। বাস্তবসত্য সাক্ষ্য দিলেও আমরা বলিব, নিশ্চয় সকল সাক্ষীকে হাজির পাওয়া যায় নাই, আসল সাক্ষীটি পালাইয়া বসিয়া আছে । যদি দেখি কোনো ডাকাতের দল খুবই উন্নতি করিতেছে, তবে সেই বাস্তবসত্যের সহায়ে এরূপ সিদ্ধাস্ত করা যায় না যে, দমাবৃত্তিই উন্নতির উপায়। তখন এই কথা বিনা প্রমাণেই বলা যাইতে পারে যে, দহ্যদের আপাতত যেটুকু উন্নতি দেখা যাইতেছে, তাহার মূল কারণ নিজেদের মধ্যে ঐক্য, অর্থাৎ দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ধৰ্মরক্ষা ; আবার এই উন্নতি যখন নষ্ট হইবে, তখন এই ঐক্যকেই নষ্ট হইবার কারণ বলিয়া বসিব না, তখন বলিব, অন্তের প্রতি অধৰ্মাচরণই তাহাদের পতনের কারণ। যদি দেখি একই লোক বাণিজ্যে প্রচুর টাকা করিয়া ভোগে তাহা উড়াইয়া দিয়াছেন, তবে এ-কথা বলিব না যে, যাহারা টাকা নষ্ট করিতে পারে, টাকা উপার্জনের পন্থা তাহারাই জানে ; বরং এই কথাই বলিব, টাকা রোজগার করিবার ব্যাপারে এই লোকটি হিসাবী ছিলেন, সেখানে তাহার সংযম ও বিবেচনাশক্তি সাধারণ লোকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল ; আর টাকা উড়াইবার বেলা তাহার উড়াইবার ক্টোক হিসাবের বুদ্ধিকে ছাড়াইয়া গিয়াছে । কলাবান গুণীরাও যেখানে বস্তুত গুণী, সেখানে তাহারা তপস্বী ; সেখানে যথেচ্ছাচার চলিতে পারে না ; সেখানে চিত্তের সাধনা ও সংযম আছেই। অল্প লোকই এমন পুরাপুরি বলিষ্ঠ যে, তাহাদের ধর্মবোধকে ষোলো জানা কাজে লাগাইতে পারেন। কিছু-না কিছু ভ্ৰষ্টতা আসিয়া পড়ে। কারণ, আমরা সকলেই হীনতা হইতে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছি, চরমে জাসিয়া দাড়াই নাই। কিন্তু