পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जाष्ट्रिङ] 83) প্রচলিত গদ্য ভাষার সহিত কথিত ভাষার সর্বাংশে ঐক্য থাকে না তাহাও বাংলা ভাষা আলোচনা করিলে দেখা যায়। একটা ভাষা যখন বহুবিস্তৃত দেশে ব্যাপ্ত হইয়া পড়ে তখন তাহা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেই—কিন্তু লিখিবার ভাষা নিয়মে এবং স্বায়ী আকারে বন্ধ হইয়া দেশান্তর ও কালাস্তরের বিকৃতি অনেকটা প্রত্যাখ্যানপূর্বক নানাস্থানীয় পণ্ডিতসাধারণের ব্যবহারযোগ্য ও বোধগম্য হইয়া থাকে, এবং তাহাই স্বভাবত ভদ্রসমাজের আদর্শ ভাষারূপে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম হইতে ভাগলপুর এবং আসামের সীমান্ত হইতে বঙ্গসাগরের তীর পর্যন্ত বাংলা ভাষার বিচিত্ররূপ আছে সন্দেহ নাই কিন্তু সাহিত্যভাষায় স্বতই একটি স্থির আদর্শ রক্ষিত হইয়া থাকে । স্বন্দরক্সপে, স্বশৃঙ্খলন্ধপে, সংহতরূপে, গভীররূপে ও স্বল্পরূপে ভাবপ্রকাশের অনুরোধে এ ভাষা যে কতক পরিমাণে কৃত্রিম হইয়া উঠে তাহাতে সন্দেহ নাই কিন্তু এই সাহিত্যগত ভাষাকেই ভিন্ন ভিন্ন প্রাদেশিক অপভাষার মূল আদর্শ বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে । প্রাচীন ভারতবর্ষে এইরূপ একদিকে মাগধী ও অন্যদিকে শৌরসেনী-মহারাষ্ট্র এই দুই মূল প্রাকৃত ছিল । অন্ত ভারতবর্ষে যত আর্ব ভাষা আছে তাহা এই দুই প্রাকৃতের শাখাপ্রশাখা । এই দুই প্রাকৃতের মধ্যে মাগধীই প্রাচীনতর। এমন কি, হর্নলে সাহেবের মতে এক সময়ে ভারতবর্ষে মাগধীই একমাত্র প্রাকৃত ভাষা ছিল । তাহা পশ্চিম হইতে ক্রমে পূর্বাভিমুখে পরিব্যাপ্ত হয় । শৌরসেনী আর একটি দ্বিতীয় ভাষাপ্রবাহ ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়া পশ্চিমদেশ অধিকার করে। হর্নলে সাহেব অল্পমান করেন, ভারতবর্ষে পরে পরে দুইবার আর্ষ ঔপনিবেশিকগণ প্রবেশ করে। তাহদের উভয়ের ভাষায় মূলগত ঐক্য থাকিলেও কতকটা প্রভেদ ছিল। প্রাকৃত ব্যাকরণকারগণ নিম্নলিখিত ভাষাগুলিকে মাগধী প্রাকৃতের শাখারূপে বর্ণনা করিয়াছেন।—মাগধী, অর্ধমাগধী, দাক্ষিণাত্যা, উৎকলী এবং শাবরী। বেহার এবং বাংলার ভাষাকে মাগধীরূপে গণ্য করা যায়। মাগধীর সহিত শৌরসেনী বা মহারাষ্ট্ৰী মিশ্রিত হইয়া অধমাগধীরূপ ধারণ করিয়াছে,—ইহা যে মগধের পশ্চিমের ভাষা অর্থাৎ ভোজপুরী তাহাতে সন্দেহ নাই। বিদর্ভ অর্থাৎ বেরার ও তাহার নিকটবর্তী প্রদেশের ভাষা দাক্ষিণাত্যা নামে অভিহিত। অতএব ইহাই বর্তমান মরাঠিস্থানীয়। উৎকলী উড়িষ্যার ভাষা, এবং একদিকে দাক্ষিণাত্য ও অন্যদিকে মাগধী ও উৎকলীয় মাঝখানে শাবরী । ع দেখা যাইতেছে, প্রাচ্য হিন্দি, মৈথিলী, উড়িয়া, মহারাষ্ট্রী, এবং আসামি এইগুলিই