পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনবাণী సిసి হে আত্মবিস্মৃত তুমি, ধরাতলে সত্য তব নাম সকলেই ভুলে গেছে, সে নাম প্ৰকাশ নাহি পায় চিকিৎসাশাস্ত্রের গ্রন্থে, পণ্ডিতের পুঁথির পাতায় ; গ্রামের গাথার ছন্দে সে নাম হয় নি। আজও লেখা, গানে পায় নাই সুর । সে নাম কেবল জানে একা আকাশের সূর্যদেব, তিনি তঁর আলোকবীণায় সে নামে ঝংকার দেন, সেই সুর ধূলিরে চিনায় অপূর্ব ঐশ্বর্য তার ; সে সুরে গোপন বার্তা জানি সন্ধানী বসন্ত হাসে । স্বৰ্গ হতে চুরি করে আনি এ ধরা, বেদের মেয়ে, তোরে রাখে কুটির-কানাচে কটুনামে লুকাইয়া, হঠাৎ পড়িস ধরা পাছে । পণ্যের কর্কশধ্বনি এ নামে কদৰ্য আবরণ মানে নি। স্বজাতি বলে, ছন্দ তোরে করে পরিহারতা বলে হবে কি ক্ষুন্ন কিছুমাত্র তোর শুচিতার। কুরচি, পড়েছ ধরা, তুমিই রবির আদরিণী । N o Ka2) Svovo8 भव्ल প্ৰায় ত্ৰিশ বছর হল শান্তিনিকেতনের শালবীথিকায় আমার সেদিনকার এক কিশোর কবিবন্ধুকে পাশে নিয়ে অনেক দিন অনেক সায়াহ্নে পায়চারি করেছি। তাকে অন্তরের গভীর কথা বলা বড়ো সহজ ছিল । সেই আমাদের যত আলাপগুঞ্জরিত রাত্রি, আশ্রমবাসের ইতিহাসে আমার চিরন্তন স্মৃতিগুলির সঙ্গেই গ্রথিত হয়ে আছে । সে কবি আজ ইহলোকে নেই। পৃথিবীতে মানুষের প্রিয়সঙ্গের কত ধারা কত নিভৃত পথ দিয়ে চলেছে । এই স্তব্ধ তরুশ্রেণীর প্রাচীন ছায়ায় সেই ধারা তেমন করে আরো অনেক বয়ে গেছে, আরো অনেক বইবে । আমরা চলে যাব। কিন্তু কালে কালে বারে বারে বন্ধুসংগমের জন্য এই ছায়াতল রয়ে গেল । যেমন অতীতের কথা ভাবছি- তেমনি ঐ শালশ্রেণীর দিকে চেয়ে বহুদূর ভবিষ্যতের ছবিও বাহিরে যখন ক্ষুব্ধ দক্ষিণের মন্দির পবন অরণ্যে বিস্তারে অধীরতা ; যবে কিংশুকের বন উচ্ছঙ্খল রক্তরাগে স্পর্ধায় উদ্যত ; দিশিদিশি শিমুল ছড়ায় ফাগ ; কোকিলের গান অহনিশি জানে না। সংযম, যাবে বকুল অজস্র সর্বনাশে স্থলিত দলিত বনপথে, তখন তোমার পাশে আসি আমি হে তপস্বী শাল, যেথায় মহিমারাশি পুঞ্জিত করেছ অভ্ৰভেদী, যেথা রয়েছ বিকশি দিগন্তে গভীর শান্তি । অন্তরের নিগৃঢ় গভীরে ফুল ফুটাবার ধ্যানে নিবিষ্ট রয়েছ উধ্বশিরে ; চৌদিকের চঞ্চলত পশে না সেথায় । অন্ধকারে নিঃশব্দ সৃষ্টির মন্ত্র নাড়ি বেয়ে শাখায় সঞ্চারে ;