পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w)0.8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী রঙরেজিনী শঙ্করলাল দিগবিজয়ী পণ্ডিত । শাণিত তার বুদ্ধি শ্যেনপাখির চঞ্চুর মতো, বিপক্ষের যুক্তির উপর পড়ে বিদ্যুদবেগে তার পক্ষ দেয় ছিন্ন করে, ফেলে তাকে ধুলোয় । রাজবাড়িতে নৈয়ায়িক এসেছে ভ্ৰাবিড় থেকে । বিচারে যার জয় হবে সে পাবে রাজার জয়পত্রী । এমন সময় চোখে পড়ল পাগড়ি তার মলিন । গেলেন রঙরেজির ঘরে । কুসুমফুলের খেত, মেহেদিবেড়ায় ঘেরা । প্ৰান্তে থাকে জসীম রঙরেজি । মেয়ে তার আমিনা, বয়স তার সতেরো । সে গান গায় আর রঙ বাটে, ENSI JA KING ORANG বেণীতে তার লাল সুতোর ঝালর, চোলি তার বাদামি রঙের, শাড়ি তার আশামানি । বাপ কাপড় রাঙায়, রঙের বাটি জুগিয়ে দেয়। আমিনা । শঙ্কর বললেন, জসীম, পাগড়ি রাঙিয়ে দাও জাফরানি রঙে, রাজসভায় ডাক পড়েছে । কুল কুল করে জল আসে নালা বেয়ে কুসুমফুলের খেতে ; আমিনা পাগড়ি ধুতে গেল নালার ধারে তুত গাছের ছায়ায় বসে । ফাগুনের রৌদ্র কলক দেয় জলে, ঘুঘু ডাকে দূরের আমবাগানে । ধোওয়ার কাজ হল, প্রহর গেল কেটে । পাগড়ি যখন বিছিয়ে দিল ঘাসের পরে রঙরেজিনী দেখল তারি কোণে লেখা আছে একটি শ্লোকের একটি চরণ “তোমার শ্ৰীপদ মোর ললাটে বিরাজে । বসে বসে ভাবল অনেকক্ষণ, ঘুঘু ডাকতে লাগল। আমের ডালে । রঙিন সুতো ঘরের থেকে এনে আরেক চরণ লিখে দিলে ‘পরশ পাই নে তাই হৃদয়ের মাঝে” ।