বসন্ত Vo রাজা । বুঝেছি, বোধ করি রাজকোষের অবস্থা দেখে পালাতে ইচ্ছে করছেন । কবি । পৃথিবীর রাজকোষ পূর্ণ করে দিয়ে তিনি পালান। রাজা । কী দুঃখে । কবি । দুঃখে নয়, আনন্দে । , রাজা । কবি, তোমার হেঁয়ালি রাখে ; আমার অধ্যাপকের দল তোমার হেঁয়ালি শুনে রাগ করে, বলে ওগুলোর কোনো অর্থ নেই । আজ বসন্ত-উৎসবে কী পালা তৈরি করেছ। সেইটে বলে । কবি । আজ সেই পলাতকার পালা । , রাজা । বেশ বেশ । বুঝতে পারব তো ? কবি । বোঝাবার চেষ্টা করি নি । রাজা । তাতে ক্ষতি নেই । কিন্তু না-বোঝাবার চেষ্টা কর নি তো ? কবি । না মহারাজ, এতে মূলেই অর্থ নেই, বোঝা না-বোঝার কোনো বালাই নেই, কেবল এতে সুর उ2८छ | রাজা । আচ্ছা বেশ, শুরু হােক । কিন্তু ও দিকে মন্ত্রণাসভার কাজ চলছে, আওয়াজ শুনে মন্ত্রীরা তোকবি । ইহা মহারাজ, তারাসুদ্ধ হয়তো পলাতকার দলে যোগ দিতে পারেন। তাতে দোষ কী হয়েছে। ফাল্লুন-যে পড়েছে। রাজা । সর্বনাশ ! এখানে এসে যদি আবারকবি । ভয় নেই। শূন্যকোষের কথাটা স্মরণ করিয়ে দেবার ভারই মন্ত্রীদের বটে, কিন্তু শূন্যকোষের কথা ভুলিয়ে দেবার ভারই তো কবির উপরে । রাজা । তা হলে ভালো কথা । তা হলে আর দেরি নয় । ভোলবার অত্যন্ত দরকার হয়েছে । দলবল সব প্ৰস্তুত তো ? আমাদের নাট্যাচাৰ্য দিনপতি কবি । ঐ তো তিনি ভারতীর কমলবনের মধুগন্ধে বিহবল হয়ে বসে আছেন । রাজা । দেখে মনে হচ্ছে বটে শূন্য রাজকোষের কথায় ওঁর কিছুমাত্র খেয়াল নেই। কবি । উনি আমাদের উৎসবের বন্ধু, দুর্ভিক্ষের দিনে ওঁকে না হলে চলে না। কারণ উনি ক্ষুধার কথা সুধা দিয়ে ভোলান । রাজা । সাধু ! আমার মন্ত্রীদের সঙ্গে ওঁর পরিচয় করিয়ে দিতে হবে । বিশেষত আমার অর্থসচিবের সঙ্গে । তিনি অত্যন্ত গভীর হয়ে আছেন । তার মনে যদি পুলক-সঞ্চার করতে পারেন তা হলে কবি - ফস করে বেশি আশা দিয়ে ফেলবেন না- রাজকোষের অবস্থা যেরকমরাজা । ইহা ইহা, বটে বটে ।- আচ্ছা, তবে তোমার পালা আরম্ভ হবে কী দিয়ে । কুৰি। যে-নেওয়া সত্যি, সে দেওয়াতে ভরতি করে। বসন্ত উৎসবে দানের দ্বারাই ধৱলী ধনী হয়ে রাজা । তা হলে ধরণীর সঙ্গে ধরণীপতির ঐখানে অমিল দেখতে পাচ্ছি। আমি তো দান করতে গিয়ে প্রায়ই বিপদে পড়ি- অর্থসচিবের মুখ অত্যন্ত গভীর হতে থাকে । কবি । যে-দান সত্য তার দ্বারা বাইরের ধন বিনাশ পায়, অন্তরের ধন বিকাশ পেতে থাকে । রাজা । ও আবার কী । এটা উপদেশের মতো শোনাচ্ছে, কবি । কবি । তা হলে আর দেরি নয়, গান শুরু হােক ।
