BOV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অক্ষয় । (আবার কানে কানো ধরাইয়া দিয়া)- দেশে অন্নজলের হল ঘোর অনটন, ধরে হুইস্কি সোডা আর মুগা-মটন । দারুকেশ্বর মাতিয়া উঠিয়া উৰ্ব্বস্বরে ঐ পদটা ধরিল এবং অক্ষয়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রবল উৎসাহে মৃত্যুজয়ও কোনোমতে সঙ্গে সঙ্গে যোগ দিয়া গোল অক্ষয় । (মৃদুস্বরে)- এসো দাড়ি নাড়ি কলিমন্দি মিঞা । যতই উৎসাহ-সহকারে গান চলিল, দ্বারের পার্থ হইতে উসফুস শব্দ শোনা যাইতে লাগিল এবং অক্ষয় নিরীহ ভালোমানুষটির মতো মাঝে মাঝে সেইদিকে কটাক্ষপাত করিতে লাগিলেন এমন সময় ময়লা বাড়ন। হাতে কলিমন্দি আসিয়া সেলাম করিয়া দাড়াইল দারুকেশ্বর । (কলিমদিকে) এই-যে চাচা। আজ রান্নাটা কী হয়েছে বলো দেখি । অক্ষয়বাবু, কারি না কটলেট । অক্ষয় । (অন্তরালের দিকে কটাক্ষা করিয়া) সে আপনারা যা ভালো বোঝেন । দারুকেশ্বর । “আমার তো মত, ব্ৰাহ্মণেভ্যো নমঃ বলে সাব-কটাকেই আদর করে নিই। অক্ষয় । তা তো বটেই, ওরা সকলেই পূজ্য। কলিমাদি সেলাম করিয়া চলিয়া গোল অক্ষয় । (কিঞ্চিৎ গলা চড়াইয়া) মশায়রা কি তা হলে আজ রাত্রেই ক্রিশচীন হতে চান । দারুকেশ্বর । আমার তো কথাই আছে শুভস্য শীঘ্ৰং । আজই ক্রিশচীন হব, এখনই ক্রিশচীন হব, ক্রিশচান হয়ে তবে অন্য কথা । মশায়, আর ঐ পুঁইশাক কলাইয়ের ডাল খেয়ে প্রাণ বঁাচে না । আনুন। আপনার পাদরি ডেকে । উচ্চস্বরে গান যাও ঠাকুর চৈতন।।চুটুকি নিয়া, এসো দাড়ি নাড়ি কলিমাদি মিঞা । ভূত্যের প্রবেশ ভূত্য । (অক্ষয়ের কানে কানে) মােঠাকরুন। একবার ডাকছেন। অক্ষয় উঠিয়া দ্বারের অন্তরালে গেল জগত্তারিণী । এ কী । কাণ্ডটা কী । অক্ষয় । (গভীরমুখে) মা সে-সব পরে হবে, এখন ওরা হুইস্কি চাচ্ছে, কী করি । তোমার পায়ের মালিশ করবার জন্যে সেই- যে ব্ৰান্ডি এসেছিল, তার কি কিছু বাকি আছে। জগত্তারিণী । (হতবুদ্ধি হইয়া) বল কি বাছা । ব্ৰান্ডি খেতে দেবে ? অক্ষয় । কী করব মা, শুনেইছ তো, ওর মধ্যে একটি ছেলে আছে যার জল খেলেই সর্দি হয়, মদ না খেলে আর-একটির মুখে কথাই বের হয় না । জগত্তারিণী । ক্রিশচীন হবার কথা কী বলছে ওরা । অক্ষয় । ওরা বলছে হিন্দু হয়ে খাওয়া-দাওয়ার বড়ো অসুবিধে, পুঁইশাক কলায়ের ডাল খেলে ওদের K63 জগত্তারিণী । (অবাক হইয়া) তাই বলে কি ওদের আজ রাতেই মুগি খাইয়ে ক্রিস্টান করবে নাকি ।
