পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা 8 SV) পূর্ণ। শ্ৰীশবাবু, মরীচিকা মেলাতে পারে, কিন্তু তৃষ্ণা তো মেলায় না। শ্ৰীশ । কেন মেলাবে । ওটা থাকা চাই । তৃষ্ণা না থাকলে আমাদের ছোটাবে কিসে। কেবল জানা দরকার কোন পথে ছুটলে ফল পাওয়া যাবে। নেপথ্যে গান । ওগো, তোরা কে যাবি পারে । বিপিন । একটু আস্তে । গান শুনতে পােচ্ছ না ? খাসা গান বটে। পূর্ণ। ঐ গানটাও কি পর্দা নয়। ওর আড়ালে যে রহস্য গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে পথে বিপথে ছােটাবার ক্ষমতা তারও আছে । বিপিন । থাক ভাই। তত্ত্বকথাটা এখন থােক । একটু শুনতে দাও । খুব কাছের বাড়ি থেকেই গানটা আসছে, শুনেছি। অক্ষয়বাবুর বাসা ঐখানেই । শ্ৰীশ । গানের কথাটা বেশ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । নেপথ্যে গান আমি ওগো, তোরা কে যাবি পারে । আমি তরী নিয়ে বসে আছি। নদী-কিনারে । ও পারেতে উপবনে কত খেলা কত জনে, এ পারেত ধুধু মরু বারি বিনা রে । এইবেলা বেলা আছে, আয় কে যাবি । মিছে কেন কাটে কাল কত কী ভাবি ৷ সূৰ্যাপাটে যাবে নেমে, সুবাতাস যাবে থেমে, খেয়া বন্ধ হয়ে যাবে সন্ধ্যা-আঁধারে । শ্ৰীশ । গানটা বোধ হচ্ছে যেন কুমার-সভাকেই ভয় দেখাবার গান । খেয়া, বন্ধ হয়ে গেলেই তো মুশকিল । বিপিন । ঐ শুনলে না বললে- “এ পারেতে ধু ধু মরু বারি বিনা রে’ ? পূর্ণ। তা হলে আর দেরি কেন । পারে যাবার জোগাড় করো। শ্ৰীশ । গলাটা শুনে বোধ হচ্ছে পারে নিয়ে যাবে না, অতলে তলিয়ে দেবে । [সকলের প্রস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য শ্ৰীশের বাসা শ্ৰীশ তাহার বাসায় দক্ষিনের বারান্দায় একখানা বড়ো হাতাওয়ালা কেদারার দুই হাতার উপর দুই পা তুলিয়া দিয়া শুক্লসন্ধ্যায় চুপচাপ বসিয়া সিগারেট যুঁকিতেছিল। পাশে টিপায়ের উপর রেকবিতে একটি গ্লাসে বরফ-দেওয়া লেমনেড ও ভূপাকার কুন্দযুলের মালা বিপিনের প্রবেশ বিপিন। কী গো সন্ন্যাসীঠাকুর । শ্ৰীশ । (উঠিয়া বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া) এখনো বুঝি ঝগড়া ভুলতে পার নি ? আচ্ছা ভাই শিশুপালক, তুমি কি সত্যি মনে কর আমি সন্ন্যাসী হতে পারি নে। বিপিন । কেন পারবে না । কিন্তু অনেকগুলি তল্পিদার চেলা সঙ্গে থাকা চাই । শ্ৰীশ । তার তাৎপৰ্য এই যে, কেউ বা আমার বেলফুলের মালা গেঁথে দেবে, কেউ-বা বাজার থেকে