পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○○ রবীন্দ্র-রচনাবলী "নৃপবালা । ও আমার নয়। ୭୩୫(୩୩ଏଠି রসিক । (নৃপকে ধরিয়া) যে জিনিসটা খােওয়া গেছে নৃপ তার উপরে কোনো দাবিও রাখতে চায় না । নৃপবালা । রসিকদাদা, ছাড়ো, আমার কাজ আছে। দ্বিতীয় দৃশ্য গোলদিঘির পথ শ্ৰীশ ও বিপিন শ্ৰীশ । ওহে বিপিন, আজ মাঘের শেষে প্ৰথম বসন্তের বাতাস দিয়েছে, জ্যোৎস্নাও দিব্যি, আজ যদি এখনই ঘুমোতে কিংবা পড়া মুখস্থ করতে যাওয়া যায় তা হলে দেবতারা ধিক্কার দেবেন। বিপিন । তাদের ধিককার খুব সহজে সহ্য হয়, কিন্তু ব্যামোর ধাক্কা কিংবা শ্ৰীশ । দেখো, ঐজন্যে তোমার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয় । আমি বেশ জানি দক্ষিনে হাওয়ায় তোমারও প্ৰাণটা চঞ্চল হয়, কিন্তু পাছে কেউ তোমাকে কবিত্বের অপবাদ দেয় বলে মলয়-সামীরণটাকে একেবারেই আমল দিতে চাও না । এতে তোমার বাহাদুরিটা কী জিজ্ঞাসা করি। আমি তোমার কাছে আজ মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করছি, আমার ফুল ভালো লাগে, জ্যোৎস্না ভালো লাগে । বিপিন । এবং শ্ৰীশ । এবং যা-কিছু ভালো লাগবার মতো জিনিস সবই ভালো লাগে । বিপিন । বিধাতা তো তোমাকে ভারি আশ্চর্য রকম ছাচে গড়েছেন দেখছি । শ্ৰীশ । তোমার ছাঁচ আরো আশ্চর্য । তোমার লাগে ভালো, কিন্তু বল অন্যরকম- আমার সেই শোবার ঘরের ঘড়িটার মতে- সে চলে ঠিক, বাজে ভুল । বিপিন । কিন্তু শ্ৰীশ, তোমার যদি সব মনোরম জিনিসই মনোহর লাগতে লাগল তা হলে তো আসন্ন বিপদ । শ্ৰীশ । আমি তো কিছুই বিপদ বোধ করি নে। বিপিন । সেই লক্ষণটাই তো সব চেয়ে খারাপ । রোগের যখন বেদনাবোধ চলে যায়। তখন আর চিকিৎসার রাস্তা থাকে না । আমি ভাই, স্পষ্টই কবুল করছি, স্ত্রীজাতির একটা আকর্ষণ আছেচিরকুমার-সভা। যদি সেই আকর্ষণ এড়াতে চান তা হলে তঁকে খুব তফাত দিয়ে যেতে হবে। শ্ৰীশ । ভুল, ভুল, ভয়ানক ভুল । তুমি তফাতে থাকলে কী হবে, তঁরা তো তফাতে থাকেন না ! সংসাররক্ষার জন্যে বিধাতাকে এত নারী সৃষ্টি করতে হয়েছে যে তঁদের এড়িয়ে চলা অসম্ভব । অতএব কৌমাৰ্য যদি রক্ষা করতে চাও তা হলে নারীজাতিকে অল্পে অল্পে সইয়ে নিতে হবে । ঐ-যে স্ত্রীসভ্য নেবার মহিলা হলে চলবে না বিপিন, অনেকগুলি স্ত্রীসভ্য চাই। বদ্ধ ঘরের একটি জানলা খুলে ঠাণ্ডা লাগালে সর্দি ধরে, খোলা হাওয়ায় থাকলে সে বিপদ নেই । বিপিন । আমি তোমার ঐ খোলা-হাওয়া বদ্ধ-হাওয়া বুঝি নে ভাই । যার সন্দির ধাত তাকে সর্দি থেকে রক্ষা করতে দেবতা মনুষ্য কেউ পারে না । শ্ৰীশ । তোমার ধাত কী বলছে হে । বিপিন । সে কথা খোলসা করে বললেই বুঝতে পারবে তোমার ধাতের সঙ্গে তার চমৎকার মিল আছে । নাড়িটা যে সব সময়ে ঠিক চিরকুমারের নাড়ির মতো চলে তা জাক করে বলতে পারব না । শ্ৰীশ। ঐটে তোমার আর-একটা ভুল। চিরকুমারের নাড়ির উপরে উনপঞ্চাশ পাবনের নৃত্য হতে দাও- কোনো ভয় নেই, বাধাৰ্বিাধি চাপাচাপি কোরো না । আমাদের মতো ব্ৰত যাদের তারা কি হৃদয়টিকে