পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

? S と রবীন্দ্র-রচনাবলী শোনা রে শোন, অবোধ মন, শোনা সাধুর উক্তি- কিসে মুক্তি সেই সুযুক্তি কর গ্রহণ । ভবের শুক্তি ভেঙে মুক্তি-মুক্ত করা অন্বেষণ । ७36 ७ (ख्व्जा भन्म, (ख्व्ना भन्म 6 । সহসা গান বন্ধ হইয়া গেল- “ও কে ও । বাবা দেখছি! সন্ধান পেয়েছেন বুঝি ! তবেই তো সর্বনাশ । আবার তো সংসারের অন্ধকূপে টেনে নিয়ে যাবেন । পালাতে হল।” 8 ফকির তাড়াতাড়ি নিকটবতী এক গৃহে প্রবেশ করিল। বৃদ্ধ গৃহস্বামী চুপচাপ বসিয়া তামাক টানিতেছিল। ফকিরকে ঘরে ঢুকিতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কে হে তুমি ” ফকির । বাবা, আমি সন্ন্যাসী । বৃদ্ধ। সন্ন্যাসী ! দেখি দেখি বাবা, আলোতে এসো দেখি । পড়ে তেমনি করিয়া ফকিরের মুখ নিরীক্ষণ করিয়া বিড় বিড় করিয়া বকিতে লাগিল—”এই তো আমার সেই মাখনলাল দেখছি। সেই নাক, সেই চোখ, কেবল কপালটা বদলেছে, আর সেই চাদমুখ গোফে দাড়িতে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে ।” বলিয়া বৃদ্ধ সস্নেহে ফকিরের শ্মশ্রল মুখে দুই-একবার হাত বুলাইয়া লইল এবং প্রকাশ্যে কহিল, “বাবা মাখন ’ বলা বাহুল্য বৃদ্ধের নাম ষষ্ঠীচরণ। ফকির। (সবিস্ময়ে) মাখন ! আমার নাম তো মাখন নয়। পূর্বে আমার নাম যাই থাক, এখন আমার নাম চিদানন্দস্বামী । ইচ্ছা হয় তো পরমানন্দও বলতে পারে । ষষ্ঠী । বাবা, তা এখন আপনাকে চিড়েই বল আর পরমান্নাই বল, তুই যে আমার মাখন, বাবা, সে তো। আমি ভুলতে পারব না।— বাবা, তুই কোন দুঃখে সংসার ছেড়ে গেলি । তোর কিসের অভাব । দুই স্ত্রী- বড়োটিকে না ভালোবাসিস, ছোটােটি আছে। ছেলেপিলের দুঃখও নেই। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সাতটি কন্যে, একটি ছেলে । আর আমি, বুড়ো বাপ, কদিনই বা বাচব- তোর সংসার তোরই থাকবে। ফকির একেবারে আঁতকিয়া উঠিয়া কহিল, কী সর্বনাশ । শুনলেও যে ভয় হয় ।” এতক্ষণে প্রকৃত ব্যাপারটা বোধগম্য হইল। ভাবিল, “মন্দ কী, দিন-দুই বৃদ্ধের পুত্রভাবেই এখানে লুকাইয়া থাকা যাক, তাহার পরে সন্ধানে অকৃতকার্য হইয়া বাপ চলিয়া গেলেই এখান হইতে পলায়ন করিব।” ফকিরকে নিরুত্তর দেখিয়া বৃদ্ধের মনে আর সংশয় রহিল না । কেষ্টা চাকরকে ডাকিয়া বলিল, ‘ওরে ও কেষ্ট, তুই সকলকে খবর দিয়ে আয় গে, আমার মাখন ফিরে এসেছে।’ (? দেখিতে দেখিতে লোকে লোকরণ্য । পাড়ার লোকে অধিকাংশই বলিল, সেই বটে । কেহ বা সন্দেহ প্ৰকাশ করিল। কিন্তু, বিশ্বাস করিবার জন্যই লোকে এত ব্যগ্ৰ যে সন্ধিগ্ধ লোকদের উপরে সকলে হাড়ে চটিয়া গেল । যেন তাহারা ইচ্ছাপূর্বক কেবল রাসভঙ্গ করিতে আসিয়াছে ; যেন তাহারা পাড়ার চৌদ্দ অক্ষরের পয়ারকে সতেরো অক্ষর করিয়া বসিয়া আছে, কোনোমতে তাহাদিগকে সংক্ষেপ করিতে পারিলেই তবে পাড়াসুদ্ধ লোক আরাম পায়- তাহারা ভুতও বিশ্বাস করে না, ওঝাও বিশ্বাস করে না, আশ্চর্য গল্প শুনিয়া যখন সকলের তাক লাগিয়া গিয়াছে তখন তাহারা প্রশ্ন উত্থাপন করে । একপ্রকার নাস্তিক বলিলেই হয়। কিন্তু, ভূত অবিশ্বাস করিলে ততটা ক্ষতি নাই, তাই বলিয়া বুড়া বাপের হারা ছেলেকে অবিশ্বাস করা যে