পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬e রবীন্দ্র-রচনাবলী সাধ্য কাহার আছে। হাতের কাছে কী আছে, কী দেওয়া যায়। ঐশ্বৰ্ষ নাই, বুদ্ধি নাই, ক্ষমতা নাই, শুধু একটা প্রাণ আছে, সেটাও যদি কোথাও দিবার থাকে এখনই ब्रि ८कणि, किरू उांशबशे वा भूजा कौ। আর স্বামীকে যদি দুগ্ধফেনের মতো শুভ্র, নবনীর মতো কোমল, শিশুকন্দপের মতো মুন্দর একটি মেহের পুত্তলি সস্তান দিতে পারিতাম। কিন্তু প্রাণপণে ইচ্ছ করিয়া মরিয়া গেলেও তো সে হইবে না। তখন মনে হইল, স্বামীর একটি বিবাহ দিতে হইবে। ভাবিল, স্ত্রীরা ইহাতে এত কাতর হয় কেন, এ কাজ তো কিছুই কঠিন নহে । স্বামীকে যে ভালোবাসে, সপত্নীকে ভালোবাসা তাহার পক্ষে কী এমন অসাধ্য। মনে করিয়া বক্ষ স্ফীত হইয়া উঠিল । প্রস্তাবট প্রথম যখন শুনিল, নিবারণ হাসিয়া উড়াইয়া দিল, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারও কর্ণপাত করিল না । স্বামীর এই অসম্মতি এই অনিচ্ছা দেখিয়া হরসুন্দরীর বিশ্বাস এবং মুখ যতই বাড়িয়া উঠিল তাহার প্রতিজ্ঞাও ততই দৃঢ় হইতে লাগিল। এদিকে নিবারণ যত বারংবার এই অনুরোধ শুনিল, ততই ইহার অসম্ভাব্যতা তাহার মন হইতে দূর হইল এবং গৃহদ্বারে বসিয়া তামাক খাইতে খাইতে সস্তানপরিবৃত গৃহের সুখময় চিত্র তাহার মনে উজ্জল হইয়া উঠিতে লাগিল । একদিন নিজেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়া কহিল, “বুড়াবয়সে একটি কচি খুকীকে বিবাহ করিয়া আমি মানুষ করিতে পারিব না ।” হরমুন্দরী কহিল, “সেজন্য তোমাকে ভাবিতে হইবে না। মানুষ করিবার ভার আমার উপর রহিল।” বলিতে বগিতে এই সস্তানহীনা রমণীর মনে একটি কিশোর বয়স্ক, মুকুমারী, লজ্জাশীল, মাতৃক্রোড় হইতে সন্তোবিচুত নববধূর মুখচ্ছবি উদয় হইল এবং হৃদয় স্নেহে বিগলিত হইয়া গেল । নিবারণ কহিল, “আমার আপিস আছে, কাজ আছে, তুমি আছ, কচি মেয়ের আবদার শুনিবার অবসর আমি পাইব না।” হরমুন্দরী বারবার করিয়া কহিল, তাহার জন্য কিছুমাত্র সময় নষ্ট করিতে হইবে না এবং অবশেষে পরিহাস করিয়া কহিল, ”আচ্ছা গো, তখন দেখিব কোথায় বা তোমার কাজ থাকে, কোথায় বা আমি থাকি, আর কোথায় বা তুমি থাক।” নিবারণ সে-কথার উত্তরমাত্র দেওয়া আবণ্ডক মনে করিল না, শাস্তির স্বরূপ হরমুন্দরীর কপোলে হাসিয়া তর্জনী আঘাত করিল। এই তো গেল ভূমিকা।