পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ○> > সমস্তাপূরণ প্রথম পরিচ্ছেদ ঝি কড়াকোটার কৃষ্ণগোপাল সরকার জ্যেষ্ঠপুত্রের প্রতি জমিদারি এবং সংসারের ভার দিয়া কাশী চলিয়া গেলেন। দেশের যত অনাথ দরিদ্র লোক র্তাহার জন্য হাহাকার করিয়া কঁদিতে লাগিল এমন বদান্ততা, এমন ধর্মনিষ্ঠত কলিযুগে দেখা যায় না, এই কথা সকলেই বলিতে লাগিল । s র্তাহার পুত্র বিপিনবিহারী আজকালকার একজন সুশিক্ষিত বি-এ । দাড়ি রাখেন, চশমা পরেন, কাহারও সহিত বড়ো একটা মিশেন না। অতিশয় সচ্চরিত্র—এমন কি, তামাকটি পর্যন্ত ধান না, তাল পর্যন্ত খেলেন না । অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো চেহারা, কিন্তু লোকটা ভারি কড়াক্কড়। র্তাহার প্রজার শীঘ্রই তাহ অনুভব করিতে পারিল । বুড়াকর্তার কাছে রক্ষা ছিল কিন্তু ইহার কাছে কোনো ছুতায় দেনা খাজনার এক পয়সা রেয়াত পাইবার প্রত্যাশা নাই। নির্দিষ্ট সময়েরও একদিন এদিক-ওদিক হইতে পায় না । বিপিনবিহার হাতে কাজ লইয়াই দেখিলেন র্তাহার বাপ বিস্তর ব্রাহ্মণকে জমি বিনা খাজনায় ছাড়িয়া দিয়াছেন এবং খাজনা যে কত লোককে কমি দিয়াছেন তাহার আর সংখ্যা নাই। তাহার কাছে কেহ একটা কিছু প্রার্থনা করিলে তিনি তাহ পূর্ণ না করিয়া থাকিতে পারিতেন না –সেটা তাহার একটা দুর্বলতা ছিল । বিপিনবিহারী কহিলেন, এ কখনোই হইতে পারে না ; অর্ধেক জমিদারি আমি লাখেরাজ ছাড়িয়া দিতে পারি না । তাহার মনে নিম্নলিখিত দুই যুক্তির উদয় হইল। প্রথমত, যে-সকল অকৰ্মণ্য লোক ঘরে বসিয়া এইসব জমির উপস্বত্ব ভোগ করিয়া স্ফীত হইতেছে তাহারা অধিকাংশই অপদার্থ এবং দয়ার অধোগ্য। এরূপ দানে দেশে কেবল আলস্যের প্রশ্রয় দেওয়া হয় । 犧 দ্বিতীয়ত, র্তাহার পিতৃ-পিতামহের সময়ের অপেক্ষা এখন জীবিকা অত্যন্ত দুর্লভ এবং দুমূল্য হইয়া পড়িয়াছে। অভাব অনেক বাড়িয়া গিয়াছে। এখন একজন ভদ্রলোকের আত্মসন্ত্রম রক্ষা করিয়া চলিতে পূর্বাপেক্ষা চারগুণ খরচ পড়ে। অতএব র্তাহার পিতা যেরূপ নিশ্চিন্তমনে দুই হস্তে সমস্ত বিলাইয়া ছড়াইয়া গিয়াছেন এখন আর তাহা করিলে চলিবে না, বরঞ্চ সেগুলি কুড়াইয়া বাড়াইয়া আবার ঘরে আনিবার চেষ্টা করা কর্তব্য ।