পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় 8?? নিচেই টানিয়া লয়। অতএব ধর্মকে কোনো জাতি যদি নীতির দিকে না বসাইয়৷ রীতির দিকে বসায়, বুদ্ধির দিকে না বসাইয়া সংস্কারের দিকেই বসায়, অন্তরের দিকে আস্ম না দিয়া যদি বাহ অনুষ্ঠানে তাহাকে বদ্ধ করে এবং ধর্মের উপরেই দেশকালপাত্রের ভার না দিয়া দেশকালপাত্রের হাতেই ধর্মকে হাত পা বাধিয়া নির্মমভাবে সমর্পণ করিয়া বলে ; ধর্মেরই দোহাই দিয়া কোনো জাতি যদি মানুষকে পৃথক করিতে থাকে, এক শ্রেণীর অভিমানকে আর এক শ্রেণীর মাথার উপরে চাপাইয়া দেয় এবং মানুষের চরমতম আশা ও পরমতম অধিকারকে সংকুচিত ও শতথগু করিয়া ফেলে ; তবে সে-জাতিকে হীনতার অপমান হইতে রক্ষা করিতে পারে এমন কোনো সভাসমিতি কনগ্রেস কনফারেন্স, এমন কোনো বাণিজ্য-ব্যবসায়ের উন্নতি, এমন কোনো রাষ্ট্রনৈতিক ইন্দ্রজাল বিশ্বজগতে নাই। সে জাতি এক সংকট হইতে উদ্ধার পাইলে আর এক সংকটে আসিয়া পড়িবে এবং এক প্রবলপক্ষ তাহাকে অনুগ্রহপূর্বক সম্মানদান করিলে আর এক প্রবলপক্ষ অগ্রসর হইয় তাহাকে লাঞ্ছনা করিতে কুষ্ঠিত হইবে না ; যে আপনার সর্বোচ্চকেই সর্বোচ্চ সন্মান না দেয় সে কখনোই উচ্চাসন পাইবে না । ইহাতে কোনো সন্দেহমাত্র নাই যে, ধর্মের বিকারেই গ্রীস মরিয়াছে, ধর্মের বিকারেই রোম বিলুপ্ত হইয়াছে এবং আমাদের দুৰ্গতির কারণ আমাদের ধর্মের মধ্যে ছাড়া আর কোথাও নাই । এবং ইহাতেও কোনো সন্দেহমাত্র নাই যে, যদি উদ্ধার ইচ্ছা করি তবে কোনো বাহিরের দিকে তাকাইয়া কোনো ফল নাই, কোনো উপস্থিত বাহ সুবিধার সুযোগ করিয়া কোনো লাভ নাই ;–রক্ষার উপায়কে কেবলই বাহিরে খুজিতে যাওয়া দুর্বল আত্মার মৃঢ়তা —ইহাই ধ্রুব সত্য যে, ধর্মে রক্ষতি রক্ষিতঃ । >\○>b" আমার জগৎ পৃথিবীর রাত্রিটি যেন তার এলোচুল, পিঠ-ছাপিয়ে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নেমে পড়েছে। কিন্তু সৌরজগৎলক্ষ্মীর শুভ্রললাটে একটি কৃষ্ণতিলও সে নয়। ওই তারাগুলির মধ্যে যে-খুশি সেই আপন শাড়ির একটি খুঁট দিয়ে এই কালিমার কণাটুকু মুছে নিলেও তার আঁচলে যেটুকু দাগ লাগবে তা অতি বড়ে নিন্দুকের চোখেও পড়বে না । এ যেন আলোক মায়ের কোলের কালো শিশু, সবে জন্ম নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ তার অনিমেষে তার এই ধৱী-দোলার শিরের কাছে দাড়িয়ে। তার একটু নড়ে না পাছে এর ঘুম ভেঙে যায়। i