পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? o o রবীন্দ্র-রচনাবলী ঘরে মানুষ,—এদেশে লক্ষ্মীর কাছ হইতে ধার না লইলে সরস্বতীর আসনের দাম কমিবে একথা আমাদের কাছে চলিবে না। . পূর্বদেশে জীবনসমস্তার সমাধান আমাদের নিজের প্রণালীতেই করিতে হইয়াছে। আমরা অশনে বসনে যতদূর পারি বস্তুভার কমাইয়াছি । এ বিষয়ে এখানকার জল হাওয়া হাতে ধরিয়া আমাদের হাতে খড়ি দিয়াছে। ঘরের দেয়াল আমাদের পক্ষে তত আবগুক নয় যতটা আবশুক দেয়ালের ফাক ; আমাদের গায়ের কাপড়ের অনেকট ংশই তাতির তীতের চেয়ে আকাশের স্বর্বকিরণেই বোন হইতেছে ; আহারের যে অংশটা দেহের উত্তাপ সঞ্চারের জন্য তার অনেকটার বরাত পাকশালার ও পাকযন্ত্রের পরে নয়, দেবতার পরে। দেশের প্রাকৃতিক এই সুযোগ জীবনযাত্রায় খাটাইয় আমাদের স্বভাবটা এক রকম দাড়াইয়া গেছে—শিক্ষাব্যবস্থায় সেই স্বভাবকে অমান্য করিলে বিশেষ লাভ আছে এমন তো আমার মনে হয় না । গাছতলায় মাঠের মধ্যে আমার এক বিদ্যালয় আছে । সে বিদ্যালয়টি তপোবনের শকুন্তলারই মতো—অনাস্ত্ৰাতং পুষ্পং কিসলয়মলুনং কররূহৈঃ—অবত ইনস্পেক্টরের কররূহ। মৈত্রেয়ী যেমন যাজ্ঞবল্ক্যকে বলিয়াছিলেন তিনি উপকরণ চান না, অমৃতকে চান,—এই বিদ্যালয়ের হইয়া আমার সেই কামনা ছিল । এইখানে ছোটোলাটের সঙ্গে একটা খুব গোড়ার কথায় আমাদের হয়তো অমিল আছে—এবং এইখানটায় আমরাও র্তাকে উপদেশ দিবার অধিকার রাখি । সত্যকে গভীর করিয়া দেখিলে দেখা যায়— উপকরণের একটা সীমা আছে যেখানে অমৃতের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। মেদ যেখানে প্রচুর, মজ্জা সেখানে দুর্বল । দৈন্ত জিনিসটাকে আমি বড়ো বলি না । সেটা তামসিক । কিন্তু অনাড়ম্বর, বিলাসীর ভোগসামগ্রীর চেয়ে দামে বেশি, তাহ সাত্ত্বিক। আমি সেই অনাড়ম্বরের কথা বলিতেছি যাহা পূর্ণতারই একটি ভাব, যাহা আড়ম্বরের অভাবমাত্র নহে। সেই ভাবের যেদিন আবির্ভাব হইবে সেদিন সভ্যতার আকাশ হইতে বস্তুকুয়াশার বিস্তর কলুষ দেখিতে দেখিতে কাটিয়া যাইবে । সেই ভাবের অভাব আছে বলিয়া যে-সব জিনিস প্রত্যেক মানুষের পক্ষে একান্ত আবস্তক তাহা দুমূল্য ও দুর্ভর হইতেছে ; গান বাজন, আহার বিহার, আমোদ আহলাদ, শিক্ষা দীক্ষা, রাজ্যশাসন, আইন আদালত সভ্য দেশে সমস্তই অতি জটিল, সমস্তই মানুষের বাহিরের ও ভিতরের প্রকৃত জায়গা জুড়ির বসে ; এই বোঝার অধিকাংশই অনাবশ্বক—এই বিপুল ভার বহনে মাছবের জোর প্রকাশ পায় বটে ক্ষমতা প্রকাশ পায় না। এইজন্ত বর্তমান সভ্যতাকে যে-দেবতা বাহির হইতে দেখিতেছেন তিনি দেখিতেছেন ইহা অপটু দৈত্যের সাতার দেওয়ার মতে, তার