পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(१७९ . * রবীন্দ্র-রচনাবলী করিতে কখনো বা সে নিশ্বাস ধারণ করিয়া রাখে, তখন গুমটে গাছের পাতা নড়ে না ; আবার যখন সে রুদ্ধ নিশ্বাস ছাড়িয়া দেয় তখন পৃথিবী কঁাপিয়া উঠে। ইহার আহারের আয়োজনটা প্রধানত ফলাহার। বর্ষাকে ক্ষত্রিয় বলিলে দোষ হয় না। তাহার নকিব আগে আগে গুরুগুরু শব্দে দামামা বাজাইতে বাজাইতে আসে,—মেঘের পাগড়ি পরিয়া পশ্চাতে সে নিজে আসিয়া দেখা দেয়। অল্পে তাহার সন্তোষ নাই। দিগ্বিজয় করাই তাহার কাজ। লড়াই করিয়া সমস্ত আকাশটা দখল করিয়া সে দিক্‌চক্রবর্তী হইয়া বসে। তমালতালী বনরাজির নীলতম প্রাস্ত হইতে তাহার রথের ঘর্ঘরধ্বনি শোনা যায়, তাহার বাক৷ তলোয়ারখানা ক্ষণে ক্ষণে কোষ হইতে বাহির হইয়া দিগবক্ষ বিদীর্ণ করিতে থাকে, আর তাহার তুণ হইতে বরুণ-বাণ আর নিঃশেষ হইতে চায় না। এদিকে তাহার পাদপীঠের উপর সবুজ কিংখাবের আস্তরণ বিছানো, মাথার উপরে ঘনপল্লবখ্যামল চন্দ্রাতপে সোনার কদম্বের ঝালর ঝুলিতেছে, আর বন্দিনী পূর্বদিগধূ পাশে দাড়াইয়া অশ্রনয়নে তাহাকে কেতকীগন্ধবারিসিক্ত পাখা বীজন করিবার সময় আপন বিদ্যুষ্মণিজড়িত কঙ্কণখানি ঝলকিয়া তুলিতেছে। আর শীতটা বৈশু । তাহার পাকা ধান কাটাই-মাড়াইয়ের আয়োজনে চারিটি প্রহর ব্যস্ত, কলাই ষব ছোলার প্রচুর আশ্বাসে ধরণীর ভাল পরিপূর্ণ। প্রাঙ্গণে গোল ভরিয়া উঠিয়াছে, গোষ্ঠে গোরুর পাল রোমস্থ করিতেছে, ঘাটে ঘাটে নৌকা বোঝাই হইল, পথে পথে ভারে মন্থর হইয়া গাড়ি চলিয়াছে ; আর ঘরে ঘরে নবান্ন এবং পিঠাপার্বণের উদযোগে টেকিশাল মুখরিত। এই তিনটেই প্রধান বর্ণ। আর পুত্র যদি বল সে শরৎ ও বসন্ত। একজন শীতের, আর একজন গ্রীষ্মের তলপি বহিয়া আনে। মানুষের সঙ্গে এইখানে প্রকৃতির তফাত। প্রকৃতির ব্যবস্থায় যেখানে সেবা সেখানেই সেন্ধি, যেখানে নম্ৰতা সেইখানেই গৌরব। তাহার সভায় শূদ্র যে, সে ক্ষুত্র নহে, ভার যে বহন করে সমস্ত আভরণ তাহারই। তাই তো শরতের নীল পাগড়ির উপরে সোনার কলকা বসন্তের সুগন্ধ পীত উত্তরীয়খানি ফুলকাটা । ইহারা ষে-পান্ধক পরিয়া ধরণী-পথে বিচরণ করে তাহা রং-বেরঙের সূত্রশিল্পে বুটিদার ; ইহাদের অঙ্গদে কুণ্ডলে অজুরীয়ে জহরতের সীমা নাই । এই তো পাচটার হিসাব পাওয়া গেল। লোকে কিন্তু ছয়টা ঋতুর কথাই বলিয়া থাকে। ওটা নেহাত জোড় মিলাইবার জন্য। তাহারা জানে না বেজোড় লইয়াই প্রকৃতির যত বাহার। ৩৬৫ দিনকে দুই দিয়া ভাগ করে—৩৬ পর্যন্ত বেশ মেলে কিন্তু