পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9ov9 রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 ২৪শে বৈশাখ অপরাহ্লে রেজুনে এসে পৌছনো গেল। চোখের পিছনে চেয়ে দেখার একটা পাকম্বন্ত্র আছে, সেইখানে দেখাগুলো বেশ করে হজম হয়ে না গেলে সেটাকে নিজের করে দেখানো যায় না। তা নাই বা দেখানো গেল, এমন কথা কেউ বলতে পারেন। ষেখানে যাওয়া গেছে সেখানকার মোটামুটি বিবরণ দিতে দোষ কী । - দোষ না থাকতে পারে, কিন্তু আমার অভ্যাস অন্যরকম। আমি টুকে ষেতে টে কে যেতে পারি নে। কখনো কখনো নোট নিতে ও রিপোর্ট দিতে অমুরুদ্ধ হয়েছি, কিন্তু সে-সমস্ত টুকরো কথা আমার মনের মুঠোর ফাক দিয়ে গলে ছড়িয়ে পড়ে যায়। প্রত্যক্ষটা একবার আমার মনের নেপথ্যে অপ্রত্যক্ষ হয়ে গিয়ে তার পরে যখন প্রকাশের মঞ্চে এসে দাড়ায় তখনই তার সঙ্গে আমার ব্যবহার । ছুটতে ছুটতে তাড়াতাড়ি দেখে দেখে বেড়ানো আমার পক্ষে ক্লাস্তিকর এবং নিফল । অতএব আমার কাছ থেকে বেশ ভদ্ররকম ভ্রমণবৃত্তাস্ত তোমরা পাবে না। আদালতে সত্যপাঠ করে আমি সাক্ষী দিতে পারি যে রেজুন নামক এক শহরে আমি এসেছিলুম ; কিন্তু যে আদালতে আরো বড়ো রকমের সত্যপাঠ করতে হয় সেখানে আমাকে বলতেই হবে, রেজুনে এসে পৌছই নি । এমন হতেও পারে, রেজুন শহরটা খুব একটা সত্য বস্তু নয়। রাস্তাগুলি সোজা, চওড়া, পরিষ্কার ; বাড়িগুলি তকৃতকৃ করছে ; রাস্তায় ঘাটে মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি ঘুরে বেড়াচ্ছে ; তার মধ্যে হঠাৎ কোথাও যখন রঙিন রেশমের কাপড়-পরা ব্ৰহ্মদেশের পুরুষ বা মেয়ে দেখতে পাই তখন মনে হয়, এরাই বুঝি বিদেশী । আসল কথা, গঙ্গার পুলটা যেমন গঙ্গার নয় বরঞ্চ সেটা গঙ্গার গলার ফাসি, রেজুন শহরটা তেমনি ব্রহ্মদেশের শহর নয়, ওটা ষেন সমস্ত দেশের প্রতিবাদের মতো । প্রথমত, ইরাবতী নদী দিয়ে শহরের কাছাকাছি যখন আসছি তখন ব্রহ্মদেশের প্রথম পরিচয়টা কী। দেখি, তীরে বড়ো বড়ো সব কেরোসিন তেলের কারখানা লম্বা লম্বা চিমনি আকাশে তুলে দিয়ে ঠিক যেন চিত হয়ে পড়ে বর্ম চুরুট খাচ্ছে। তার পরে যত এগোতে থাকি, দেশ-বিদেশের জাহাজের ভিড় । তার পর যখন ঘাটে এসে পৌছই তখন তট বলে পদার্থ দেখা যায় না— সারি সারি জোটগুলো যেন বিকটাকার লোহার জোকের মতো ব্রহ্মদেশের গায়ে একেবারে ছেকে ধরেছে। তার পরে আপিস-আদালত দোকানবাজারের মধ্যে দিয়ে আমার বাঙালি বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে উঠলুম ; কোনো ফাক দিয়ে ব্ৰহ্মদেশের কোনো চেহারাই দেখতে পেলুম না। মনে হল, রেজুন ব্রহ্মদেশের ম্যাপে