\రీSS রবীন্দ্র-রচনাবলী অম্বন্দর করে। অঙ্কের কোঠার মধ্যে ষাকে ধরে না তাকে সে আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয় । পুরুষ একদিন ছিল মিষ্টিক, ছিল অতল রসের ডুবারি, ছিল ধ্যানী। এখন সে হয়েছে মেয়েদের মতোই সংসারী। কেবল প্রভেদ এই যে, তার সংসারে আলো নেই, বাতাস নেই, আকাশ নেই ; বস্তুপিণ্ডে সমস্ত নিরেট। সে ভরি ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যে সেই আকাশ সে পায় না যে আকাশে আপন কল্পনাকে রূপে রসে মুক্তি দিতে পারে। আজকালকার কবি আপন কাব্যে, শিল্পী আপন কারুতে, অনির্বচনীয়কে স্বন্দরকে অবজ্ঞা প্রকাশ করতে আরম্ভ করেছে। এটা কি পৌরুষের উলটো নয়। পুরুষই তে৷ চিরদিন সুন্দরের কাছ থেকে আপন শক্তির জয়মাল্য কামনা করেছে। মিষ্টিক্ পুরুষ তার ধ্যানশক্তিতে, তার ফলাসক্তিবিহীন সাধনায়, বাস্তবের আবরণ একটার পর একটা যতই মোচন করেছে ততই রসের লোকে, অধ্যাত্মলোকে সে ভূমার পরিচয় পেয়েছে। আজ কেবলই সে থলির পর থলির মুখ বাধছে, সিন্দুকের পর সিন্দুকে তালা লাগাচ্ছে ; আজ তার সে মুক্তি নেই যে মুক্তির মধ্যে স্বন্দর আপন সিংহাসন রচনা করে। তাই তার মেয়েরা বলছে, “আমরা পুরুষ সাজব ।” তাই তার কাব্যসরস্বতী বলছে, বীণার তারগুলোকে যত্ন করে না বাধলে যে-স্থরটা ঝনঝন করতে থাকে সেইটেই খাটি বাস্তবের স্থর, উপেক্ষার উচ্ছৃঙ্খল দুরন্তপনায় রূপের মধ্যে যে বিপর্যয় যে ছিন্নভিন্নতা ঘটে সেইটেই আর্ট । দিন চলে গেল। ভুলে ছিলুম যে, সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে চলেছি। মন চলেছিল আপন রাস্তায়, এক ভাবনা থেকে আর-এক ভাবনায়। চলেছিল বললে বেশি বলা হয়। উট যেমন বোঝা পিঠে নিয়ে মরুর মধ্যে পথ আন্দাজ করে চলে এ তেমন চলা নয় ; এ যেন পথের খেয়াল না রেখে ভেসে যাওয়া, কোনো বিশেষ ঘাটের কাছে বায়না না নিয়ে শুধু-শুধু বেরিয়ে পড়া, কথাগুলোকে নিজের চেষ্টায় চালনা না ক’রে দিকের হিসেব না রেখে তাদের আপনার ঝোঁকে চলতে দেওয়া । তার স্থবিধা হচ্ছে এই যে, কথাগুলো নিজেরাই হয় বক্তা, আর মনটা হয় শ্রোতা । মন তখন অন্তকে কিছু দেবার কথা ভাবে না, নিজের কাছ থেকে নিজে পায়। মনের ভূগোলে অনাবিষ্কৃতের আর অস্ত নেই। সে-সব জায়গায় পৌছে দেবার পথগুলো সবই নদীর মতো, অর্থাৎ সে পথ নিজে চলে ব’লেই চালায় ; তারই স্রোতে মন আপনাকে ভাসিয়ে দিতে পারলে নিজের মধ্যে অপরিচিতের পরিচয় পেতে থাকে। আর্যাবর্তের বুকের উপর দিয়ে ষে গঙ্গা চলে গেছে সেই তো ভারতবর্ষের অপরিচিত পূর্বের সঙ্গে অপরিচিত