পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্পষ্ট বুঝতে পারলে সোনার খনির মুনফাটাই মরীচিকা আর যার আবির্ভাবকে ক্ষণকালের জন্তে ওই চিহ্নহীন সমূত্রে নামহীন আকাশে দেখা গেল তারই মধ্যে চিরকালের অফুরান ঐশ্বর্য, সেই হচ্ছে অরূপের মহাপ্রাঙ্গণে রূপের নিত্যলীলা । স্বাক্টর অন্তরতম এই অহৈতুক লীলার রসটিকে যখন মন পেতে চায় তখনই বাদশাহি বেকারের মতো সে গান লিখতে বসে। চারখানি পাপড়ি নিয়ে একটি ছোটাে জুইফুলের মতো একটুখানি গান যখন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে তখন সেই মহা-খেলাঘরের মেজের উপরেই তার জন্যে জায়গা করা হয় যেখানে যুগ যুগ ধরে গ্রহনক্ষত্রের খেলা হচ্ছে । , সেখানে যুগ আর মুহূর্ত একই, সেখানে স্বৰ্ষ আর স্বর্যমণি ফুলে অভেদাত্মা, সেখানে সাবাসকালে মেঘে মেঘে যে রাগরাগিণী আমার গানের সঙ্গে তার অন্তরের মিল আছে । আজ পনেরো-ষোলো বছর ধরে কর্তব্যবুদ্ধি আমাকে নানা ভাবনা নানা ব্যস্ততার মধ্যে জোরে টেনে নিয়ে ফেলে আমার কাছ থেকে কবে কাজ আদায় করে নিচ্ছে। এখানকার সকল কাজই মোটা কৈফিয়তের অপেক্ষ রাখে। খোচা দিয়ে দিয়ে কেবলই জিজ্ঞাসা করে, “ফল হবে কি ”. সেইজন্তে যার ফরমাশ কৈফিয়তের সীমানা পেরিয়ে আপন বেদরকারি পাওনা দাবি করে ভিতরে-ভিতরে সে আমাকে কেবলই প্রশ্ন করতে থাকে, “তুমি কবি, চির-ছুটির পরোয়ানা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছ, তার করলে কী। কাজের ভিড়ের টানাটানিতে পড়ে একেবারেই জাত খুইয়ে বোসো না।” নিশ্চয় ওরই এই তাগিদেই আমাকে গান লেখায় ; হটগোলের মধ্যেও নিজের পরিচয়টা বজায় রাখবার জন্তে, লোকরঞ্জনের জন্তে নয়। কর্তব্যবুদ্ধি তার কীতি ফেদে গম্ভীরকণ্ঠে বলে, “পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে গুরুতর।” তাই আমার ভিতরকার বিধিদত্ত ছুটির খেয়াল বঁশি বাজিয়ে বলে, “পৃথিবীতে আমিই সবচেয়ে লঘুতম।” লঘু নয় তো কী ! সেই জন্তে সব জায়গাতেই হাওয়ায় হাওয়ায় তার পাখা চলে, তার রঙ-বেরঙের পাখা । ইমারতের মোটা ভিত ফেদে সময়ের সর্ব্যয় করা তার জাত-ব্যাবসা নয় ; সে লক্ষ্মীছাড়া ঘুরে বেড়ায় ফকির পথে, ষে পথে রঙের ঝরনা রসের ধারা ঝরে ঝরে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে বিপুল একটা বাজেখরচের মতো। . . e আমার কেজো পরিচয়টার প্রতি ঈর্ষা করে অবজ্ঞা করে আমার অকেজো পরিচয়টা আমাকে যখন তখন গানলিখিয়ে লিখিয়ে নিজের দলিল ঠিক করে রাখছে। যখন বিরুদ্ধপর্কে মাতব্বর সাক্ষী এসে জোটে, তখনই নিজের দাবির দলিল খুব বড়ো করে