পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२०8 " রবীন্দ্র-রচনাবলী লাগিলাম। মছলন্দের আসনে যমুনাতীরের গবাক্ষে মুখাসীন৷ ষোড়শী নবাববালিকাকে দেখিলাম, তীর্থমন্দিরে সন্ধ্যারতিকালে তপস্বিনীর ভক্তিগদগদ একাগ্র মূর্তি দেখিলাম, তাহার পরে এই দাৰ্জিলিঙে ক্যালকাটা রোডের প্রান্তে প্রবীণার কুহেলিকাচ্ছন্ন ভগ্নহৃদয়ভারকাতর নৈরাপ্ত্যমূর্তিও দেখিলাম, একটি স্বকুমার রমণীদেহে ব্রাহ্মণমুসলমানের রক্ততরঙ্গের বিপরীত সংঘর্ষজনিত বিচিত্র ব্যাকুল সংগীতধ্বনি সুন্দর স্বসম্পূর্ণ উদু ভাষায় বিগলিত হইয়া আমার মস্তিষ্কের মধ্যে স্পদিত হইতে লাগিল । চক্ষু খুলিয়া দেখিলাম, হঠাৎ মেঘ কাটিয়া গিয়া স্নিগ্ধ রেীত্রে নির্মল আকাশ ঝলমল করিতেছে, ঠেলাগাড়িতে ইংরাজ রমণী ও অশ্বপৃষ্ঠে ইংরাজ পুরুষগণ বায়ুসেবনে বাহির হইয়াছে, মধ্যে মধ্যে দুই-একটি বাঙালির গলাবন্ধবিজড়িত মুখমণ্ডল হইতে আমার প্রতি সকৌতুক কটাক্ষ বৰ্ষিত হইতেছে। দ্রুত উঠিয়া পড়িলাম, এই সূর্যালোকিত অনাবৃত জগৎদৃশ্বের মধ্যে সেই মেঘাচ্ছন্ন কাহিনীকে আর সত্য বলিয়া মনে হইল না । আমার বিশ্বাস, আমি পর্বতের কুয়াশার সহিত আমার সিগারেটের ধূম ভূরিপরিমাণে মিশ্রিত করিয়া একটি কল্পনাখণ্ড রচনা করিয়াছিলাম— সেই মুসলমানব্রাহ্মণী, সেই বিপ্রবীর, সেই যমুনাতীরের কেল্লা, কিছুই হয়তো সত্য নহে। বৈশাখ ১৩০৫ পুত্রযজ্ঞ বৈদ্যনাথ গ্রামের মধ্যে বিজ্ঞ ছিলেন সেইজন্য তিনি ভবিস্তুতের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া বর্তমানের সমস্ত কাজ করিতেন। যখন বিবাহ করিলেন তখন তিনি বর্তমান নববধূর অপেক্ষ ভাবী নবকুমারের মুখ স্পষ্টতররূপে দেখিতে পাইয়াছিলেন। শুভদৃষ্টির সময় এতটা দূরদৃষ্টি প্রায় দেখা যায় না । তিনি পার্কা লোক ছিলেন সেইজন্য প্রেমের চেয়ে পিওটাকেই অধিক বুঝিতেন এবং পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভাৰ্য এই মর্মেই তিনি বিনোদিনীকে বিবাহ করিয়াছিলেন। কিন্তু এ সংসারে বিজ্ঞ লোকও ঠকে। যৌবনপ্লাগু হইয়াও যখন বিনোদিনী তাহার সর্বপ্রধান কর্তব্যটি পালন করিল না তখন পুরাম নরকের দ্বার খোলা দেখিয়া বৈদ্যনাথ বড়ো চিন্তিত হইলেন। মৃত্যুর পরে তাহার বিপুল ঐশ্বৰ্যই বা কে ভোগ