পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাকঘর ۹ سان অনেক পুরোনোকালের খুব বড়ে বড়ো গাছের তলায় তোমাদের গ্রাম— একটি লাল রঙের রাস্তার ধারে । না ? 龜 দইওআলা। ঠিক বলেছ বাবা । অমল। সেখানে পাহাড়ের গায়ে সব গোরু চরে বেড়াচ্ছে । দইওআলা। কী আশ্চর্য ! ঠিক বলছ। অামাদের গ্রামে গোরু চরে বৈকি, খুব চরে। অমল। মেয়েরা সব নদী থেকে জল তুলে মাথায় কলসী করে নিয়ে যায়— তাদের লাল শাড়ি পরা। দইওআলা। বা ! বা ! ঠিক কথা। আমাদের সব গয়লাপাড়ার মেয়েরা নদী থেকে জল তুলে তো নিয়ে যায়ই। তবে কিনা তারা সবাই যে লাল শাড়ি পরে ত৷ নয়— কিন্তু বাবা, তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে! অমল ৯ সত্যি বলছি দইওআলা, আমি একদিনও যাই নি। কবিরাজ যেদিন আমাকে বাইরে যেতে বলবে সেদিন তুমি নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে ? দইওআলা। যাব বৈকি বাবা, খুব নিয়ে যাব ! অমল । আমাকে তোমার মতো ঐ রকম দই বেচতে শিখিয়ে দিয়ে। ঐ রকম বঁাক কাধে নিয়ে— ঐ রকম খুব দূরের রাস্ত দিয়ে । দইওআলা। মরে যাই! দই বেচতে যাবে কেন বাবা। এত এত পুথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে। অমল । না, না, আমি ককৃখনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমাদের রাঙা রাস্তার ধারে তোমাদের বুড়ে বটের তলায় গোয়ালপাড়া থেকে দই নিয়ে এসে দূরে দূরে গ্রামে গ্রামে বেচে বেচে বেড়াব। কী রকম করে তুমি বল, দই, দই, দই— ভালো দই। আমাকে স্বরটা শিখিয়ে দাও । দইওআলা। হায় পোড়াকপাল ! এ স্বরও কি শেখবার স্বর ! অমল। না, ন, ও আমার শুনতে খুব ভালো লাগে । আকাশের খুব শেষ থেকে যেমন পাখির ডাক শুনলে মন উদাস হয়ে যায়— তেমনি ঐ রাস্তার মোড় থেকে ঐ গাছের সারির মধ্যে দিয়ে যখন তোমার ডাক আসছিল, আমার মনে হচ্ছিল— কী জানি কী মনে হচ্ছিল । দইওআলা। বাবা, এক ভাড় দই তুমি খাও। অমল । আমার তো পয়সা নেই। দইওআলা। নানা না না—পয়সার কথা বোলো না। তুমি আমার দই একটু খেলে আমি কত খুশি হব।