পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छूभिक এই ছড়াগুলি ছেলেদের জন্যে লেখা। সবগুলো মাথায় এক নয় ; রোলার চালিয়ে প্ৰত্যেকটি সমান সুগম করা হয় নি। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত জটিল যদি কোনোটা থাকে। তবে তার অর্থ হবে কিছু দুরূহ, তবু তার ধ্বনিতে থাকবে সুর । ছেলেমেয়েরা অর্থ নিয়ে নালিশ করবে: না, খেলা করবে ধ্বনি নিয়ে । ওরা অর্থলোভী জাত নয় । ছড়ার ছন্দ প্ৰাকৃত ভাষার ঘরাও ছন্দ । এ ছন্দ মেয়েদের মেয়েলি আলাপ, ছেলেদের ছেলেমি প্ৰলাপের বাহনগিরি করে এসেছে । ভদ্রসমাজে সাভাযোগ্য হবার কোনো খেয়াল এর মধ্যে নেই । এর ভঙ্গিতে এর সজায় কাব্যসৌন্দৰ্য সহজে প্ৰবেশ করে, কিন্তু সে অজ্ঞাতসারে । এই ছড়ায় গভীর কথা হালকা চালে পায়ে নূপুর বাজিয়ে চলে, গাতীর্যের গুমোর রাখে না । অথচ এই ছড়ার সঙ্গে ব্যবহার করতে গিয়ে দেখা গেল যেটাকে মনে হয় সহজ সেটাই সব চেয়ে কম সহজ | ছড়ার ছন্দকে চেহারা দিয়েছে প্ৰাকৃত বাংলা শব্দের চেহারা । আলোর স্বরূপ সম্বন্ধে আধুনিক বিজ্ঞানে দুটাে উলটাে কথা বলে । এক হচ্ছে আলোর রূপ ঢেউয়ের রূপ, আর হচ্ছে সেটা কণাবৃষ্টির রূপ । বাংলা সাধুভাষার রূপ ঢেউয়ের, বাংলা প্ৰাকৃত-ভাষার রূপ কণাবৃষ্টির । সাধুভাষার শব্দগুলি গায়ে গায়ে মিলিয়ে গড়িয়ে চলে, শব্দগুলির ধ্বনি স্বরবর্ণের মধ্যবর্তিতায় আট বাধতে পারে না । দৃষ্টান্ত যথা- শমনদমন রাবণ রাজা, রাবণদমন রাম । বাংলা প্রাকৃত-ভাষায় হসন্ত-প্রধান ধ্বনিতে ফাক বুজিয়ে শব্দগুলিকে নিবিড় করে দেয় । পাতলা, আঁজলা, বাদলা, পাপড়ি, চাঁদনি প্রভৃতি নিরেট শব্দগুলি সাধুভাষার ছন্দে গুরুপাক । সাধুভাষার ছন্দে ভদ্র বাঙালি চলতে পারে না, তাকে চলিতে হয়, বসতে তার নিষেধ, বসিতে সে বাধ্য । ছড়ার ছন্দটি যেমন ঘোষাৰ্ঘেষি শব্দের জায়গা, তেমনি সেই-সব ভাবের উপযুক্ত- যারা অসতর্ক চালে ঘেষাৰ্ঘেযি করে রাস্তায় চলে, যারা পদাতিক, যারা রথচক্রের মোটা চিহ্ন রেখে যায় না পথে পথে, যাদের হাটে মাঠে যাবার পায়ে-চলার-চিহ্ন ধুলোর উপর পড়ে আর লোপ পেয়ে श ! শান্তিনিকেতন 3. т ২ আশ্বিন ১৩৪৪ থ ঠাকুর